রত্নদীপা দে ঘোষ - মায়াজম

Breaking

১৫ মার্চ, ২০১৫

রত্নদীপা দে ঘোষ


রঙকথা 


কোন রঙের পারাপারে অপার হবো , কোন রঙে আঁকা থাকবে আমার স্বপ্নসম্ভব ... মাধুকরি ... সেটা বড় কথা নয় । আসল কথা হল অন্ধকার আর আলোর মিশেল । একটা নতুন রঙ । প্রতিশ্রুতি বানানো । সব রঙই যে দিগন্তসমান ... অপার্থিব হবে অথবা সব মগডালের চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকবে চূড়ান্ত চকমকিবৃক্ষ ... সব অলীকই অলৌকিক নয় কিন্তু ... 
_
গ্লাসরঙের পেয়ালা যেমন বেশ গভীর । জলের সরু নাভি ? নাকি তরলের কাঁচা সৌন্দর্য । রাত্তিরের ঘুমনীল অথবা জোলামের আরক ... সেই গানান্তরের রঙটি শেষ অবধি কোন রঙ ? প্রশ্নটি ভাবায় আমাকে ... ভাবতে ভাবতে দেখি বেশ কাঁচায় পাকায় চৌষট্টি কলায় আগুনের ধিকিধিকি । সোনা রঙের সোনাটা । সেই সোনাটা সৌন্দর্যে আমি রঙিন ... পথ থেকে পথি , ন থেকে নদী , বন থেকে অরণ্য ... হ থেকে হরিণ , বিস্ময়ের হিরণ্ময় ... 

প্রথম রঙের লাল । চরকির মত গোলাকার তার সাথে মিশিয়ে দিই দ্বিতীয় রঙের আয়তাকার বেগুনি । জিওগ্রাফির ভূগোল দুলিয়ে দুটি হরফ , আকাশিনীল পৌঁছে দিলাম সরবতি দুয়ারে ... কি আশ্চর্য ... আমার এক চুমুকে পৃথিবী কেমন পিপাসা রঙের স্তন ... মাত্র তিনটি দৌড়ে চলে গেলুম তার বুকের অজন্তায় ... সহস্র রঙের ইলোরা ...জন্সন রঙের কান্নায় হেসে উঠলো তাবৎ শিশুবাতি ... কি অমোঘ সেই হর্ষ সেই বিষাদ সেই মা রঙের দীর্ঘবিনুনি বাতাস ... আমাকে নাচিয়ে কাঁদিয়ে বেলোয়ারি করে ... উড়ে গেল সেই রঙমশাই । 

ঝাপ্সা হতে শিখিনি । ছবি আঁকতেও জানি না । বেওয়ারিশ সুনামির সমুদ্র দেখা চোখ ... কে কাকে রঙ করে ? কার হাতে কবেকার তুলি ? কে তবে কার চিত্রনাট্যে বসে বসে রঙের লিফলেট বিলি করে ... রঙ বুঝি শৈশব ? ভুখা ভিখিরির নিজস্ব রঙ আছে নাকি ? বাদামপাহাড়ের নিজস্ব বাদামি রঙ ? নেই তো । সামান্য বিকেল আর কয়েক ফোঁটা সকালরঙের অক্সিজেন ... আছে কি ডোরাকাটা প্রসন্নতা ? আর কি কি আছে তার ? যৌনতা শ্রেষ্ঠ সেই অসহ্য যুবক অহঙ্কার ...

ভুল আমার হতেই পারে । সঠিক রঙের মানুষ চিনতে শিখিনি যে ! সন্ধেঘরানার চিবুকে দেখেছি বেদমরঙের রঙিন ... আমি ভেবেছি ...এই তবে প্রেম প্রেম ! .. এই বুঝি কোহরার ঝাঁপি থেকে লাফ দেবে আরশিরঙের ফোয়ারা ... আমাকে জড়িয়ে ধরবে ... আদিম করে দেবে ... চুমু খাবে প্রবল শীতরাত, শেষট্রেনের মত আঁকাবাঁকা সুর ... ছড়াবে ধমনীরঙের লাভা ... আমি ভিজে যাবো সেই আসন্ন প্রসবে ...পেট্রোলরঙের বিদ্যুৎ উঠবে জ্বলে ... সিসেরঙের তোড় , ঢের প্লাবন ... আহা ! কি সুতীব্র ব্রহ্মান্ড... ব্রহ্মানন্দের শিখায় শিখায় কি অপূর্ব গ্লাসনস্ত সবুজ ... 

কিন্তু তার বদলে হঠাৎ দেখা হবে ক্লান্ত রঙের পাখি । হঠাৎ চিনতে পারবো পালকবিহীনতা । বালিকাভুলের পারিজাত । 
অস্থিহীন প্রতিমারঙে হঠাৎ চিনতে পারবো নিজেকে , নিজের রঙ পুড়িয়ে দেবে মাধবী হাস্নুহানা । আমিটি ছুঁয়ে হেরে যাই বারবার ... আমার ইচ্ছেরঙ নেই । সারং পরা আয়নাও নেই । বৃন্দাবনী গয়নারা দূরের স্যাকরা পেরিয়ে আমাকে ডেকে নেবে কাছে , সেই বাঁশীরঙ ভায়োলিন ... শুনতে পাবো ... কু ... ঝিকঝিক ... আশ্চর্য তরঙ্গ ... ইথারে ঝরবে রেলনক্সার মোরব্বা ... 
আলোকবর্ষীয় পুরুষ এগিয়ে আসবে । ভ্রূধ্বনিতে ডাকবে আমাকে ... ভালোবাসি ভালোবাসি ... 
শুধু আমারি রঙে বুঁদ । সেই তুঁতেকাচের অনন্ত বুদবুদ .

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র