বসন্তটনিক – আসছে বছর আবার হবে
কালোরঙ্গের কিং আর ফর্সাকালারের পাগল দুটি পারস্পরিক বিরোধী শব্দবন্ধ ...যদিও আগামী কলমের সাথে এর কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। যেমন নেই বসন্তের সাথে খোকনের কোনো ওতপ্রোত রিলেশান। তবে খোকনদের অ্যানুয়াল পরীক্ষার জন্য বাংলার স্যার নবকুমার বাবু দশটি অনুচ্ছেদ রচনা দিতেন – তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিলো “ঋতুরাজ।” ভূমিকা’র ভ-এ ভ্যানতাড়া গছানোর পর শুরু হত বসন্তকে তোল্লা দিয়ে একটি মামাবাড়ি ... অ্যানুয়াল পরীক্ষার আগে আগে ভোর ভোর উঠে খোকনা মুখস্থ করত বসন্তের রচনা- বসন্তকাল খুব ভালো, খুব আরামদায়ক হাওয়া বয়, বেশ ভাল্লাগে, দোল খেলা হয় ইত্যাদি ...সেই সেখান থেকেই খোকনের বসন্তকাল শুরু।
তীর্যক বা সরাসরি ... উল্লম্ব বা অনুভূমিক ... গ্রহে বা উপগ্রহে নামতায় নামতায় অনেক ভাবে দেখা হয়েছে বসন্ত, নানাবিধ দৃষ্টিকোণ বুলিয়ে। এই মুহূর্তে আমাদের ক্যামেরাটি আংশিক হেলানো অবস্থায় পড়ে আছে একটি গন্ডপ্ল্যাটফর্মে। বসন্তের গন্ধ আছে, শব্দ আছে, আছে স্বাদ ও অনুভব – কিন্তু এসমস্তকিছু একটা ক্যামেরা ধরতে পারে না ... বিজলীতারের কাটাকুটিতে তার লেন্স অসমান। কয়েকশো ভোল্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিভৃত খাম্বা- তার গায়ে বিজ্ঞাপিত সতর্কীকরণ...যা জানেনা ওই সদ্য এসে বসা কাক। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের প্রতিকূল বিস্তারগুলি উষ্ণ হয়ে ওঠে। লোক ওঠে- লোক নামে- ভিড়ভাট্টা-ঠেলাঠেলি –হকারদের ব্যস্ততা ... মধ্যযামে আসন্ন হয়ে ওঠে বসন্ত। গনগনে সূর্যের তেজ গোটা প্ল্যাটফর্মটাকেই গলিয়ে দেবে যেন। একজোড়া কাপল তিল্লিবালি কুলফি চুষতে চুষতে ক্যামেরাকে ক্রস করে। ওদের গালে-চুলে আবির। ক্যামেরা ওদের হাসিমুখ ধরে। একটা কুকুর লালাভর্তি জিভ নিয়ে হ্যাহহ হ্যাহহহ করতে করতে এগিয়ে আসে ক্যামেরার দিকে ... প্রথমে দেখে ...তারপর শোঁকে...তারপর পা তুলে দেয়... তরঙ্গ নেমে আসে লেন্সে। কোনও ওয়াইপার নেই। পরবর্তী লোকালের জন্য অপেক্ষ্মমান কিছু যাত্রী সময় অতিবাহনের তুমুল চেষ্টা করে। ওরা কোনও ক্লিক চায় না ... কিশোর ছেলেটি গ্লুকণ্ডি-র বোতল থেকে ঘনঘন এনার্জি চুষে নেয় আর ওয়্যাকম্যানে গান শোনে আনমনা হয়ে। কি শুনছে সে ? বাউল ফিউশন! না হার্ডরক ? ক্যামেরা জানে না ...ক্যামেরা শুধু দেখে। প্রৌঢ লোকটিকে দেখেই বোঝা যায় বেশ কিছুসময় পরে সে বাড়ি ফিরছে ...একহাতে আবিরের প্যাকেট-রঙ্গের শিশি- বাহারি পিচকারি আর অন্যহাতে মিষ্টির প্যাকেট। পরবর্তী লোকালের জন্য অপেক্ষা করছে সব্বাই। ক্যামেরা এদের তুলে রাখে ... অপেক্ষা করছে না শুধু একটা পাগল। পাগল, কারণ আর সবার মত ওর জামা-কাপড় বা গাল পরিষ্কার না ... আর সবার মত সে বসার জায়গা দেখে বসে না ... যেখানে কুলোয় সেখানেই বসে যায়, অত মাপ-জোখ নেই। দাঁড়িগোঁফের জঙ্গলে তারও কে যেন রঙ লাগিয়ে গেছে। ফর্সা না কালো বোঝার উর্ধ্বে ক্যামেরা শুধু বোঝে তার খুশীর সীমা নেই । সে এখন রঙ্গিন একটা পাঁউরুটি খাচ্ছে ...ক্যামেরার ঝাপ্সা কাঁচ সেসব টুকে রাখে। লোকাল অ্যানাউন্সের মাঝে মাঝেই বেজে চলেছে “খোল দ্বার খোল”-এর উত্তেজনাবিহীন একচেটিয়া সুর। এভাবেই বসন্তপ্রহর ক্রমশ সূর্য নিভিয়ে দেয়। বসন্তঘুমে ঢলে পড়ে পাগল। চড়ামেকআপওলা একজন প্রৌঢ মহিলা ক্যামেরার পাশ দিয়ে হেঁটে যায় ... ঠোঁটে তার টকটকে লিপস্টিক – চোখে আইলাইনার- কাজল- মোটকা মতন গড়ন – চিকন শাড়ির ফাঁক দিয়ে শারীরিক রেখাগুলি বোঝা যায় – ব্লাউজের আড়াল থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিভাজিকা ...ভ্যানিটি ব্যাগটি নিয়ে সে হেলেদুলে চলে যায় – তবে এসব কিছুই ক্লিক করে না ...শুধু তার খোপার শিমূলটা ধরা পড়ে
নামতার মত করে খোকন মুখস্থ করে “ঋতুরাজ।” ক্যামেরার স্ক্রিনটা ক্রমশ কালো হয়ে যায়, দখিনা বাতাস ততখনে শুকিয়ে দিয়েছে ডগিশিট্
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন