সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী - মায়াজম

Breaking

১৫ মার্চ, ২০১৫

সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী




বর্ণালী


স্বপ্নরা নাকি সাদা কালো হয়। এ কথা কোথাও একটা ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম। সত্য মিথ্যা জানিনা। তবে তার বহু আগেই আমি প্রচুর রঙিন স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলাম। রং চেনা আর রঙ পেন্সিল চেনা কোনটা আগে হয়েছে ঠিক খেয়াল নেই তবে গুঁড়ো গুঁড়ো রং হাতে, বিছানার চাদরে, বই খাতা চেয়ার টেবিল আর ধবধবে চুনকাম করা দেওয়ালে মাখামাখি হতে নিজের চোখে দেখেছি আর একলা একলা আশ্চর্য হয়েছি।জন্মদিনে বাবার দেওয়া রঙের বাক্সজুড়ে দু’ডজন টুকরো খুশির ফোয়ারা ছুটল চারদিকে।কিন্তু মনের রঙ তো মাত্র চব্বিশটা নয়। রামধনুর মাথায় উঠে সে রঙিন গ্যাস বেলুন পেড়ে আনে আকাশের নীল ছাদ থেকে অনায়াসে, সাদা কালো পোর্টেবল টিভি স্ক্রিনের ভিতরে সব রং গুলো কিভাবে কল্পনায় জেগে ওঠে সেটা ভেবে অবাক হয়।আবার খুব জোরে দুচোখ টিপে খানিকক্ষণ বন্ধ করে রেখে ঝপ করে চোখ মেললেই সারা দুনিয়াটার উপর স্নিগ্ধ নীলের আস্তরণ দেখে ভারী মজা পায় রোদেলা দিনে।আকাশের রং নীল কেন লেখা থাকে এটা নিয়ে গভীর আপত্তি ছিল আমার। তাহলে মাঝ বিকেলের হলদে আকাশ, হালকা সাঁঝের বেগুনী আকাশ,ভোরের আলোয় লালচে আকাশ,বাদলা দিনের কালচে আকাশ,গুমোট দিনের ঝাপসা আকাশ এগুলো কি রং নয়? মেঘ গুলো সব নির্ঘাত রঙের কারবারি। ওদের থোকা থোকা সাদা ফুলো ফুলো পেটের ভিতর লাল নীল হলুদ সবুজ বেগুনি কমলা সব রং নিয়ে আসে, সকাল বিকেল পসরা সাজায় আর সন্ধ্যে হলে ফুসমন্তরে আবার সাদা কালো দুনিয়ায় ফিরে যায়।পাশের বাড়ির রোহিত আঁকার কম্পিটিশনে গাছের পাতায় লাল রং করে সুন্দর ছবিটার বারোটা বাজিয়ে যখন আঁকার স্যারের বকুনি খেয়ে চুপচাপ জল ঝরাচ্ছিল চোখ থেকে, আমি চুপিচুপি জিজ্ঞেস করেছিলাম ওকে। কেন এমন করলি রে? বলল আমি তো সবুজই  দেখেছি রে জানিনা কি করে ওটা লাল হয়ে গেল।প্রথমে ভেবেছিলাম রোহিত হয় মিথ্যে বলছে বাঁচার জন্য নয়ত এটা ম্যাজিক। বাড়িতে এসে বাবাকে প্রশ্ন করতেই জানলাম রঙ না চিনতে পারার সেই অদ্ভুত অসুখটার কথা। আসল রঙের বদলে অন্য রং দেখা, কি আশ্চর্য! মানুষদের ও যে কত বিচিত্র রং। কোন অসুখে কেউ ভুল করে সেই সব রং এক লহমায় চিনে নিতে পারে কি?পারলে বেশ হত কিন্তু।রঙ তো অনুভূতিরও। লাল রং টা দেখলেই কেমন একটা ভয় আসে মনে, নীল তেমনি ঠাণ্ডা শান্তির সাথে কি এক অমোঘ নিষিদ্ধতার টান আনে চোখে, সবুজ যেন শুধু প্রাণোচ্ছলতার সমার্থক আর হলুদ নিয়ে আসে কি এক পরিচিত প্রাচীন বিষণ্ণতা।আমাদের জাতীয় পতাকার ত্রিবর্ণও তো রীতিমত ভেবেচিন্তে সাজানো। গৈরিক যেমন শক্তি আর উদারতার প্রতীক,সাদা রং শান্তি,সততা ও পবিত্রতার বার্তা দেয়, সবুজ তেমন গড়ে তোলে বিশ্বস্ততা, উর্বরতা এবং উন্নতির সোপান।এসব অবশ্য বড় হয়ে জানা। তবে  তো আরও ভয়ানক কথা জানলাম পড়াশুনা করতে গিয়ে যখন শুনলাম এই সাত রঙের দুনিয়ার বাইরে এমন অসংখ্য রঙ আছে যা আমাদের সামান্য চোখে ধরাই পড়েনা।অদৃশ্য সেই সব রঙের আলোয় অন্ধকার কাটেনা আরও অন্ধকার জগতের। যাই হোক, এইসব ভাবনায় উদাসী হয়ে যাবার আগে মনে পড়ছে সেই দিনটার কথা যেদিন প্রথম রঙ খেলা দেখেছিলাম। জ্বর হয়েছিল বলে ঘরে বসেই সেই বাসন্তী সকালে মুঠো মুঠো রঙিন ধুলো উড়তে দেখলাম পথে। অবাক জানলা দিয়ে চেয়ে দেখলাম আমার চেনা মানুষগুলো সব কেমন অচেনা, চেহারায় বদল ঘটলে যে মানুষ গুলোও বদলে যায় দেখেছিলাম সেদিন যখন পাশের বাড়ির রাশভারী জ্যেঠুকেও দেখলাম চলমান রামধনুটির মতন রেকর্ডে বাজা ‘রঙ বরসে’র সাথে তালে তাল মিলিয়ে নাচছেন আর প্রাণ খুলে হাসছেন ছোট ছোট পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে, জ্যেঠিমা চলে যাবার পর সেই প্রথম হাসতে দেখেছিলাম ওনাকে...




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র