অর্ঘ্য দীপ - মায়াজম

Breaking

২৫ সেপ, ২০২২

অর্ঘ্য দীপ

 পুরুষজন্ম





'বুঝলে বাবা, পুরুষজন্মের এই হল নিয়তি৷ সকলের জীবনে, প্রতিটি পুরুষমানুষের জীবনেই এমন একজন অল্পবয়সি মেয়ে থাকে, যাকে সে আজীবন খুঁজে বেড়ায় কিন্তু পায় না কোনওদিন৷'
অন্ধ ফকির ধীরে ধীরে এই কথা বলেন৷ তারপর বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন৷ ফের জিজ্ঞাসা করেন,
'তুমি যাকে খুঁজছ, তাকে প্রথমবার কবে দেখেছিলে?'
কবে দেখেছিলাম? কবে? পুরোনো দিনের কথা ভাবতে থাকি আমি৷ তখন আমার বয়স কতই বা হবে, এই তেরো কি চোদ্দ বচ্ছর৷ প্রথমবার তাকে দেখার পর বেকুব বনে গিয়েছিলাম পুরোপুরি৷ মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম তার রূপ৷ সারা গা দিয়ে যেন আলোর ছটা বেরোচ্ছে৷ অমন পরীর মতো সুন্দর মেয়ে আর তো দেখিনি...
এমন সময় অদূরে কোনও ফুলগাছে ফুল ফোটে৷ অজানা কী একটা নীল রঙের ফুল। ভারী মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে৷ আমার মন উদাস হয়ে যায় আরও৷ আমি সেই ফকিরকে বলি, 'আপনি আমাকে পথ দেখান৷ যে পথে গেলে তাকে আমি পাব, সেই পথ৷'
আমার কথা শুনে ফকির সামান্য হাসেন ৷
হেসে বলেন, 'বাবা, সেই মেয়ে কি এখনও একইরকম আছে ভেবেছ? তুমি যাকে দেখেছিলে, দেখে মুগ্ধ হয়েছিলে, সে ছিল নিতান্তই একজন বালিকা৷ এতদিনে তার বয়স বেড়েছে অনেক ৷ সে এখন পূর্ণযৌবনা নারী। তার বিবাহ হয়েছে অন্য পুরুষের সঙ্গে৷ সংসার হয়েছে৷ তুমি তাকে ভুলে যাও।'
ফকিরের কথায় আমার মন ভাঙে ৷ আমি উঠে চলে আসি বৃক্ষতল ছেড়ে৷ হাঁটতে থাকি ৷ হাঁটতেই থাকি ৷ পথ আমাকে নিয়ে যায় অন্য অন্য পথে৷ পথের ক্লান্তিতে মালিন্য আসে শরীরে। সময়ের অমোঘ নিয়মে বয়স বাড়তে থাকে, বয়সের সঙ্গে বাড়ে অবুঝ অপেক্ষা৷
অথচ এই ঘোর পুরুষজন্মের বুঝি এমনই নিয়তি ৷ আমি আকুল হই বারবার, আকুল হয়ে আশ্রয় খুঁজি নারীস্পর্শে। আমাকে ঘিরে আকাশে জমা হয় মেঘ ৷ শেষদৃশ্যে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি আসে ৷
বৃষ্টি নয়, পরীদের চোখের জল...

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র