তন্ময় ভট্টাচার্য - মায়াজম

Breaking

২৪ জানু, ২০১৬

তন্ময় ভট্টাচার্য

                                                       চাপা আগুন














সবচেয়ে খারাপ লাগে খুব কাছের লোকও ব্যঙ্গ করে যখন। মনে হয়, যার ওপরে সমস্ত ভরসার ব্যাগ ঢেলে দিয়েছি সেই যদি নিপুণভাবে ছুরি চালিয়ে ক্ষতবিক্ষত করতে পারে, তাহলে দুনিয়ার কোনো মেশিনই তা ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারবে না। কাঁধে তুলব ,তাও ভয়ে ভয়ে; এই বুঝি ছিঁড়ে গেল তাপ্পি থেকে! আর সমস্ত আড়াল গড়াগড়ি খাবে রাস্তার ধুলোয়।

বেশিরভাগ লোক যা সহজে বুঝতে বা করতে পারে না, তা নিয়ে ঠাট্টা করা বাঙালির সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়াই বটে। খুব কম লোকই তার ব্যতিক্রম। অন্তত ঠোঁট বেঁকিয়ে একটু অবজ্ঞা সে ছুঁড়বেই। আর, ফায়ারিং স্কোয়াডে যদি গুটগুটি গিয়ে দাঁড়ায় কবিতা, তাহলে তো কথাই নেই। প্রথমে উলঙ্গ করে তারিয়ে তারিয়ে ধর্ষকাম উপভোগ কর, তারপর গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দাও। কবিতা লেখে! কবিতা আবার মানুষে লেখে নাকি! শালা নেই কাজ তো খই ভাঁজ!

সাবধান বন্ধু। কলম তোলার আগে, এমনকী তোলার পরেও পাঁচিল তোমায় বাধা দিতে আসবে। ছ্যাঁদা না করতে পারলেই ইতি। আকাশ-বাতাস-স্কুলের গেট-কলেজের ক্যান্টিন-শিয়ালদা স্টেশান-প্রেমিকার বাড়ি এমনকি রাতের স্বপ্ন পর্যন্ত জিভ ভ্যাঙ্গাতে থাকবে - "কবি কবি ভাব/ছন্দের অভাব"। জীবনে যে দু'ছত্তর রবীন্দ্রনাথের পদ্যও মুখস্থ রাখতে পারেনি সেও অনায়াসে তোমায় দেখে হাসবে আর বলবে - "কবি কবি ভাব/ছন্দের অভাব"। ইংরিজি প্যারাগ্রাফ আর বেকায়দায় পড়ে অফিশিয়াল লেটার ছাড়া নিজেরা কখনও কিছু বানিয়ে লিখেছে কিনা সন্দেহ, চলে এলেন টিকি নাড়াতে! যেন মনুমেন্ট ফেঁদে বসেছেন ময়দানে একেকজন।

প্রতিবাদ করলে আরও পাঁচ-ছ'টা ভ্যাঙানি চেপে বসবে পরপর তোমার ঘাড়ে। আর, যদি দেঁতো হাসি হেসে অপমান(হ্যাঁ, ইয়ার্কি নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপমানের মতোই গায়ে বেঁধে) উড়িয়ে দিতে চাও, তাহলে অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন - "বল তো, 'জল পড়ে/পাতা নড়ে' কার লেখা?" "বাবরের বাবার নাম কী?" "রবীন্দ্রনাথ বৌদির সঙ্গে কী কী করেছিলেন" ইত্যাদি। এ এক অদ্ভুত নিয়ম আবহমান কাল ধরে চলে আসছে কলমধারীদের প্রতি। অথচ, প্রশ্নকর্তা-রা রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গটি ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই ক-অক্ষর গোমাংস। আর যেটি বা জানেন, তাও আবার পরতে পরতে মাখন লাগানো। এদের সবার ইন্টারভিউ-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে পা ফেলে ফেলে।

যারা এসব ব্যঙ্গ করেন, জীবনে একটিও কবিতা লিখতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কেননা, যিনি পেরেছেন, তিনি এমন উৎকট রসিকতার ধারেকাছেও ঘেঁষবেন না। তিনি জানেন, আনন্দের কাছে তাবড় তাবড় চাওয়া-পাওয়া তুচ্ছ হয়ে যায়। যারা পারলেন না, তারা খুব ভালো করেই জানেন যে তাদের পারার কোনও দরকারও নেই, এমনিতেই জীবন তরতরিয়ে বইছে, কেন বাপু বেকার থুতু ছেটানো? একটা স্বপ্ন দেখতে চাওয়া চোখকে ব্যঙ্গ করা মানে যে তার দেখাটাকেই নিষ্প্রভ করে দেয়া, তার দশটা-পাঁচটার পর উপরি আদায়ের প্ল্যানিং ঘোরা মাথায় ঢুকবে না। তার চেয়ে বরং নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকুন না!

আজ বোধহয় কবিতা লিখতে-চাওয়া মানুষটির চেয়ে অন্য যে কেউ বেশি আদরণীয় মানুষের কাছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র