১)
“জীবনটা নদীর মতই এগোচ্ছে, কখনও ছোট, বড় পাথরে ধাক্কা, আবার
কখনো সমান্তরাল পথে এগিয়ে যাওয়া। থেমে থাকার উপায় বা ইচ্ছে কোনটাই নেই। বড় পাথরের
ধাক্কায় বুকের রক্তক্ষরণ শুধু অনুভূত হয় নিজের মধ্যেই। সাদা চোখে দেখা যায় না সেসব
লাল ছোপ। এক শরীর চাওয়া বুভুক্ষু মন তখনি নদী হয় যখন...”
-হ্যালো
খুব বিরক্তির সঙ্গে ফোনটা ধরলেন অজিতেশ।
লেখালেখির সময় কথা বলতে একদমি ভালো লাগে না তাঁর। এই যে লাইনটা এখানে থেমে গেল,
আটকে গেল সহজাত গতিবেগ, আবার নতুন করে ভাবতে হবে। এমনিতেই
অম্বার চরিত্রকে এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে এতটাই জটিল দেখিয়েছে অজিতেশ, এখন জট খুলতে নিজেই হিমসিম খাচ্ছেন।
- হ্যালো অজিতেশ বসু বলছেন?
অপরপ্রান্তে সুরেলা গলা রিনরিন করে
বাজছে। শুনে মনে হচ্ছে আঠেরো, উনিশের
ছুঁড়ি। নিশ্চয় কোন কাগজের অফিসের রিসেপ্সনিস্ট। এখন এই পোস্টে কমবয়সী মেয়েরা রোজ
আসা যাওয়া করে। অজিতেশ একটু গম্ভীর হলেন।
- হ্যাঁ অজিতেশ, আপনি?
- অম্বা বলছি, কথা বলা যাবে?
অজিতেশ হকচকিয়ে গেলেন। এ কি ধরণের
রসিকতা? যে অম্বাকে নিয়ে তাঁর
৬৩ বছরের চুলে নতুন করে পাক ধরছে তাঁর নাম নিয়ে কে? আর তাছাড়া এটাতো অসম্ভব। গত একমাস ধরে উপন্যাসটি লিখছেন অজিতেশ,
কিন্তু এই স্ক্রিপ্ট তাঁর শোওয়ার ঘরের
বাইরে যায়নি। বাড়িতে তো দুটি প্রাণী সর্বসাকুল্যে। সে আর ছেলে অমিতেশ। রান্নার বা
ঠিকে লোক সময়মত তাদের ডিউটি সেরে চলে যায়।
- অম্বা? কোন অম্বা?
- সেকি? অম্বা তো এখন আপনার শিরায় শিরায়, মজ্জাগত। তাঁকে না চেনার ভান করছেন?
- দেখুন এখন আমি ইয়ার্কির মুডে নেই,
তাছাড়া আমি ব্যস্তও
- কে মারছে ইয়ার্কি? আপনার কি মনে হচ্ছে আমার গলা শুনে?
আমি আপনার সমবয়সী?
- কিন্তু আমার অম্বা আমার সমবয়সী, আর তুমি যখন আমার সমবয়সী নও তাহলে তুমি
অম্বাও নও।
ইশ ব্লান্ডার হল। কে না কে? অম্বার সম্বন্ধে তাঁর একটা শব্দও বলা
ঠিক হল না। মেয়েটার উদ্ধত কথাবার্তায় মাথা গরম হয়ে গেল। অমি ঠিকি বলে, আজকার তাঁর ধৈর্য কমে গিয়েছে। কেউ তাঁর
উপন্যাসের সূত্রটা বের করে নিতে চাইছে না ত? আজকাল ত চারিদিকে শুধু প্ল্যাগারিজম।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা
করলেন কিছুটা।
- সরি আপনাকে দুম করে তুমি বলাটা ঠিক হল
না, যদিও গলা শুনে অনেক
ছোটই মনে হচ্ছে।
- আমার শরীরের বয়স আর আপনার অম্বার মনের
বয়স সমান। অম্বা আপনার বয়সী হলেও তাঁর মনের বয়স তো আমার কাছাকাছিই।
- এতকিছু আপনি জানেন কি করে?
- প্রতিদিন আপনার কলমের কালিতে আমার নামটা
সহস্রবার লেখেন আপনি, এতে
অবাক হওয়ার কি আছে?
- দেখ অম্বা-
- যাক আপনি মেনে নিলেন আমি অম্বা
- কি চাও তুমি?
- অম্বার মধ্যে এত জটিলতা বুনছেন কেন?
তাঁর বৈধব্যযোগ ছিল বলে প্রেমিকের সাথে
বিয়ে দিলেন না। স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রেমিকের কাছে ফিরে গেলেও স্বামীর সম্পত্তি
থেকে পুত্র সন্তানেরা বঞ্চিত হবে বলে আবারো বিয়ে হল না। প্রেমিক অভিমানে সরে পড়ল।
অম্বা ফিরতে চাইল। এবার প্রেমিক অরাজী। নারীচরিত্র এতটাই জটিল? মেল ইগো? এঞ্জয় করছেন অম্বার এত ঘাত প্রতিঘাত।
- অম্বা খুব স্ট্রং একজন মানুষ, সে এরকমভাবে ভাবে না তার জীবনটা।
অজিতেশ খুব চিন্তায় পড়লেন, পাঠক কি তবে এভাবে নেবে অম্বাকে?
কিন্তু সেটা ত অন্যায় হবে। অম্বার মধ্যে
তিনি বিশ্বের সেরা জীবনীশক্তি ভরতে চেয়েছেন।এত লড়াইয়ের পরেও অম্বার কোন আইডেন্টিটি
ক্রাইসিস নেই। অজিতেশের অসহায় লাগতে লাগল।
- আমি তোমার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করতে
চাই না
- আপনার মত নামীদামী লেখকেরা যা খুশি
লিখতে পারেন, চরিত্রের কাছে কোন
দায়বদ্ধতা নেই আপনাদের। পাবলিশিং হাউসগুলো শুধু অজিতেশ বসু নাম পেলেই মালামাল হয়ে
যাবে। আপনিও সমৃদ্ধ হবেন। আত্মতুষ্টিতে ভরে যাবেন। দু একটি আনন্দ নিরানন্দ
পুরস্কারও জুটিয়ে ফেলবেন।কিন্তু আমি এত সহজে ছাড়ছি না আপনাকে। শুভরাত্রি।
ফোন রাখার পর রীতিমত হতভম্ব অজিতেশ।
অদ্ভুত মেয়ে একটা। তার চেয়েও বড় ব্যাপার অম্বা অজিতেশের বেডরুম থেকে বেরল কিভাবে।
অমির এসবে কোন ইন্টারেস্ট নেই। একজন নামকরা সাহিত্যিকের ছেলে এতটুকুই সে এঞ্জয়
করে। এরপর সারাদিন কেরিয়ার আর বন্ধুবান্ধব। অনুপমার মৃত্যুর পর অমি আর অজিতেশের
মধ্যে একটা আচ্ছন্ন দেওয়াল দাঁড়িয়ে গেছে। অবশ্য কারোরই তাগিদ নেই সে দেওয়াল
ভাঙার।অবশ্য এ ব্যাপারে অজিতেশের দোষই সর্বাধিক আজ আর এ নিয়ে কোন দ্বিধাবোধ নেই।
একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হওয়ার তাগিদে অনুপমা, অমিকে তেমন সময় দেওয়ায় হয়ে উঠল না। অনুপমার ভেতরে অসুখেরা দানা
বাঁধল। অজিতেশ যখন তৎপর হলেন তখন দেরি হয়ে গেছে অনেক। অমি একটা চাপা অভিমান নিয়ে
দূরে দূরে রইল।অজিতেশের দুনিয়ায় এত গভীরতা অমির সাথে অনুপমা চলে যাওয়ার পরও এ
দূরত্ব কমল না। নাহ আজ আর লেখা এগোবে না। অজিতেশ ডিনার করতে উঠলেন। সেলফোন আবার
বেজে উঠল। অজিতেশের দেখার ইচ্ছে হল না। খেতে বসে রুটিগুল নিয়ে খালি নাড়াচাড়াই হল।
সবকিছুই কেমন যেন তেতো লাগছে। এতখানি লেখার পর কি বন্ধ করে দিতে হবে উপন্যাসটা?
আর দিন কুড়ির মধ্যে লেখা শেষ করে
পাঠানোর কথা বিমলকে।বিমল অলরেডি তাগাদা শুরু করে দিয়েছে। বিমলের এখন সম্পাদক
হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি। চটাতে চান না তাঁকে অজিতেশ। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে নিজের
ঘরে ফিরলেন।
ছটা মিসড কল। অন্য আরেকটা আননোন
নাম্বার। এতগুলো ফোন। অমি এখনো বাড়ি ফেরেনি। কিছু হল না তো ছেলেটার? ফোনটা করতে যাওয়ার আগেই আবার ফোন এল।
- আমি দীপক, কিরে শরীর ভাল ত? ফোন
ধরছিস না
- আরে তুই, দেশে এলি নাকি? নারে
একটু অন্য ঘরে ছিলাম
- হ্যাঁরে, ছেলে মেয়ে নিয়ে বিদেশের পাত্তারি গুটিয়ে চলে এলাম। আমি শেষ
জীবনটা এখানেই থাকতে চাই। পোশাকি জীবন আর ভাল লাগছে না। ছেলেমেয়েরা ফিরতে চাইলে
যেতে পারে।
- বাহ ভাল করেছিস। আমার নাম্বার পেলি
কোথায়?
- কেন? তোকে অমি কিছু বলেনি? ও এসেছিল তো আজ সন্ধেতেই। জমিয়ে আড্ডা হল। ওর কাছ থেকেই পেলাম।
- অমি? না ওতো ফেরেইনি এখনো
- বলছিল তোর রুটিনের কথা। সারাদিন বেডরুমে
বন্দী করে রাখিস নিজেকে। আর মাঝে মাঝে প্রাইজ ট্রাইজ নিতে যাস
- হা হা হা কি যে বলিস। একদিন চলে আয় সবাই
মিলে।
- সে আর বলতে হবে না। অমি করিতকর্মা।
কালকেই আসছি সপরিবারে
অজিতেশের আজ কোন হিসেবই মিলছে না। অমির
আবার দীপকের সাথে কিভাবে যোগাযোগ হল? অজিতেশের
সাথে মাঝেমধ্যে মেইলের আদানপ্রদান হোত। অমি তো অনেক ছোটবেলায় দেখেছে দীপককে।
অজিতেশকে তো কখনই বলেনি অমি দীপকের সাথে কন্টাক্ট আছে ওর। সবকিছুই খুব গোলমেলে আজ।
অজিতেশ ঘুমের ওষুধ খেয়ে একটা বই টেনে শুয়ে রইল। নাহ কিছু পড়তেও ভাল লাগছে না।
২)
- গুড মর্নিং বাবা
- কি ব্যাপার এত সকাল সকাল?
- কাল দীপক আংকেল ফোন করেননি? ওঁরা আজ আসছেন তো। আমিই বলতাম, তারপর প্ল্যান হল আংকেল ফোন করে তোমায়
সারপ্রাইজ দেবেন। খাবার বাইরে থেকে আরেঞ্জ করেছি। আমার দুজন বন্ধুও আসবে।
অমি খুব উচ্ছ্বসিত। অজিতেশ শেষ কবে
অমিকে এমন হাসিখুশি দেখেছেন মনে করতে পারলেন না। অবশ্য তেমন করে দেখা হয় কই?
- আজ তোর অফিস নেই? বাই দ্য ওয়ে দীপকের কথা আগে বলিসনি ত?
- ছুটি নিলাম। তোমার ফ্যানেরা একটা তোমার
নামে ফেসবুক পেজ খুলেছে। তাতে তোমার সমস্ত গল্প উপন্যাস নিয়ে আলোচনা হয়। প্রচুর
অনুরাগী। দীপক আংকেল আর আংকেলের মেয়ে দিয়াও ওখানে অনেক কথা বলে। একটা পোস্টে
দেখেছিলাম আংকেল লিখেছিলেন যে তোমরা ছেলেবেলার বন্ধু। দিয়ার সাথে ওখানেই আলাপ।
আমরা খুব ভাল বন্ধু। একটা যোগাযোগ হয়েই গেল। তুমি যা ব্যস্ত তোমায় বলা হয়ে ওঠেনি।
অমির গলায় কি একটু অভিমানের সুর। অজিতেশ
ভেবেও আমল দিলেন না।
- ওহ। তাই নাকি? তুই এসব পেজ টেজ দেখিস নাকি?
- হুম অনেকেই জানে আমি তোমার ছেলে। অনেক
পোস্টে আমায় ট্যাগ করে। তবে দিয়া তোমার খুব বড় ফ্যান।আমাজন থেকে তোমার প্রত্যেকটা
বই কিনে পড়ে।
- তাই নাকি?
সাড়ে দশটা নাগাদ পেল্লায় গাড়িতে দীপক,
মৌসুমি, দিয়া আর দিয়ার ভাই সৌজন্য এসে হাজির। পুরো হৈ হৈ রৈ রৈ আয়োজন।
অজিতেশ বুঝতে পারলেন, অনেকদিন
ধরেই অমি এসব আয়োজন করেছে। তবে পুরনো বন্ধু পেয়ে অজিতেশও স্মৃতির স্রোতে হারিয়ে
গেলেন। হারানো দিনের গল্পে একটা তাজা হাওয়া অনুভব করলেন। মৌসুমিও বেশ হাসিখুশি।
সেই দীপকের বিয়ের পর এই প্রথম দেখা।
দিয়া বেশ মিষ্টি মেয়ে। ২২ বছরের মেয়ে
আন্দাজে বেশ ম্যাচিওরড কথাবার্তা। চেহারাতেও একটা বোল্ডনেস আছে। অমির সাথে বেশ
ঘনিষ্ঠ হয়েই কথা বলছে। বোঝায় যাচ্ছে অনেক দিনের সম্পর্ক। আর সম্পর্ক একটা নাম ও
পেয়েছে। অমির বন্ধুরাও ওকে নিয়েই মেতে আছে।অধিকাংশ সময় দিয়া নিজের ফোন নিয়ে খুটখাট
করতে লাগল তারপর একসময় ব্যালকনিতে উঠে গেল।দীপক ছেলেবেলার নানারকম ঘটনা মৌসুমিকে
গল্প করে শোনাচ্ছেন। অজিতেশও মজা করছেন সেসব নিয়ে। দিয়ার কথা বলার স্টাইলটা খুব
চেনা চেনা। অজিতেশ মনে করতে পারলেন না। এইসময় অজিতেশের ফোন বেজে উঠল। কালকের
নাম্বারটা। ফোন নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন।
- আজ নিজের নাম বল
- অম্বা
- দেখ আমার বাড়িতে প্রচুর গেস্ট, তাছাড়া কাল থেকে খুব ডিস্টার্ব আমি।
তুমি আমার কাজ পণ্ড করছ। আমি কিন্তু পুলিশে জানাব
- তাতে অম্বার চারিত্রিক দোষ কিছু লঙ্ঘন
হবে?
- কি চাও তুমি?
- অম্বাকে সহজ ভাবে ভাবতে দিন দয়া করে।
মেয়েটির আশপাশ থেকে কথাবার্তা ভেসে
আসছে। খুব চেনা কিছু গলা। কেউ চেঁচিয়ে বলল, “দিয়া এনি প্রব্লেম? এখানে
কেন?” অমির গলা? দিয়া-
ফোন কেটে গেল। ডাইনিং হলে ফিরলেন
অজিতেশ। অজিতেশের দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছে দিয়া। অস্বস্তি হচ্ছে খুব। অজিতেশ আর
ভণিতায় গেলেন না
- এ রসিকতার মানে কি দিয়া?
- অম্বা স্ট্রেস লাগছে আংকেল। আরেকটু
সিম্পল হোক লাইফ। এখনকার ভিউয়ার্স যেভাবে দেখে সবকিছু।
দীপক আর মৌসুমি চুপ। অমিও বুঝে উঠতে
পারছে না কি বলবে।
- কিন্তু অম্বা পৌঁছল কি করে তোমার কাছে?
- অমি দিয়েছে। অমি একটা ফেসবুক পেজ চালায়
আপনার নামে। ওকে আপনার সব লেখা খুব খুঁটিয়ে পড়তে হয়। ওখানে অনেক ফ্যান অনেক
কোশ্চেন রাখে। অমি তার আন্সার করে। কখনো আমাদের মধ্যে ডিস্কাসও হয়। পুজোতে আপনার
অনেক লেখা আসছে। তাই অমি পড়ে রাখছে আগে থেকেই। আমাকেও পড়াচ্ছে। এই গেম টা আমিই
খেলেছি। অমি হেল্প করেছে। অম্বা অসাধারণ। তবে আপনার ফ্যানদের এক্সপেক্টেশন ছুঁতে
সিমপ্লিসিটি খুব প্রয়োজন। এক সময়ের ক্লাসিক রচনাকারী অজিতেশ বসু শুধুমাত্র নামে
কাটুক সেটা এক্সপেক্টেড নয়। রিডার্স, অজিতেশ
বসুর সাথে অম্বাকেও মনে রাখুক। এটা আমাদের দুজনেরি মত।
ডাইনিং হল খাবারের গন্ধে ম ম করছে। দিয়া,
অমি, মৌসুমি খাবার সার্ভ করার তোড়জোড় শুরু করেছে। সৌজন্য গিটার
বাজিয়ে জামাইকা ফেয়ারওয়েল গাইছে।
“এক শরীর চাওয়া বুভুক্ষু মন তখনি নদী হয়
যখন আশেপাশের পাহারাদার গাছেরা ছায়াময় হয়।“
অম্বার সব জট খুলে যাচ্ছে। অজিতেশের
মুখে প্রশান্তির ছায়া। পাহারাদারের মত উত্তরসূরিরা ছায়াময় হচ্ছে।
ভাল লাগল। তবে পরশুরাম এর বিখ্যাত গল্প " বটেশ্বরের অবদান" যা থেকে সন্দীপ রায় পরে 'চার' ছবিতে একটি কাহিনী রেখেছিলেন তার সাথে অদ্ভুত মিল পেলাম। মূল ভাবনার জায়গাটা এক দু ক্ষেত্রেই।
উত্তরমুছুনSo sharp writing... Khub valo laaglo
উত্তরমুছুন