রুখসানা কাজল - মায়াজম

Breaking

১৫ এপ্রি, ২০১৫

রুখসানা কাজল


ডেভিড 



আমাদের আদ্যিকালের পাঁচফুটি ভাঙ্গাচোরা দেয়াল টপকে লাফিয়ে নামে ডেভিড। কালো প্যান্ট কালো গেঞ্জিতে ওর সাদা মুখে নীল চোখদুটো এই সন্ধ্যাতেও ধ্বক ধ্বক করছে। আমার হাত থেকে সাঁঝ সন্ধ্যার ধূপদানি কেড়ে নিয়ে বলল, ঘরে চল, কুইক কুইক। আমি ছুটে ওর সাথে আমার রুমে ঢুকে পড়ি। “ তোর ঝাক্কাস মা টা কোথায় রে ?” বাসায় নেই জেনেই এক লাফে বিছানার উপর উঠে বসে। ময়লা পা, ঘামে ভেজা গা। আমি খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠার আগেই ডেভিড ফিস ফিস করে উঠে, এই আমি না তোর বর। যা শিগগীর জল নিয়ে আয়। জল খাবো । হাতের কাছে বাপির কাঁসার ঘটি পেয়ে তাতেই জল দিয়ে বলি, ঝেড়ে বল কি শয়তানি করে এসেছিস আজ ? ডেভিড গ্যাঁট হয়ে বসে জানায়, “মোস্তাফা উকিলের কলা কেটে এনেছি । শালা খচ্চর । নালিশ দিয়েছে পপের কাছে । আমি নাকি ওর মেয়েকে ইয়ে করেছি।” তা ও পারে। এমন নালিশ প্রায় প্রতিদিন পায় ডাঃ ভ্যান আঙ্কল। তাতে ডেভিডের কচুও হয় না। আমি এবার সত্যি করে জানতে চাই তুই ঐ মেয়েকেও খেলি ! পারিসও । 

মাতা মেরির নামে শপথ করে ডেভিড। আমরা ওর শপথকে কোনদিন পাত্তা দিইনি । আজও দিলাম না। ও রেগেমেগে ক্ষ্যাপার মত বলল , হয়েছে হয়েছে এইবার আমার সাথে হাত লাগা তো । একটানে আমার হারমোনিয়ামের বাক্স খুলে হারমোনিয়ামটা বের করে নেয় । তারপর অন্ধকারে দৌড়ে বাইরে গিয়ে ফিরে আসে এককাঁদি সবুজ কলা নিয়ে। আমার চোখ কপালে দেখে খিঁচিয়ে উঠে, ধর ধর । এটাকে এই বাক্সের মধ্যে ভরে রাখ । পেকে গেলে ব্যানানা পিকনিক করব। বাক্সের ঢাকনি বন্ধ করে তার উপর হারমোনিয়াম রেখে সিগ্রেট ধরিয়ে গালটা এগিয়ে দেয়। ফু: তোর ঐ বানর মুখে আমি চুমু খাই না । জোর করতেই কাঁসার ঘটি দিয়ে ওর মাথায় ঠুন ঠুন করে লাগিয়ে দিই। ডেভিড শুয়ে শুয়ে পা নাচাতে নাচাতে বলে, তুই ছাড়া আর কাউকে আমি চুমু খাই না। ঐ শালী মিথ্যে বলেছে । আমি তোর জন্যে মন্টুর দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম । শপথ যীশুর । তা আমি জানি । কারণ মা আজকাল ডেভিডকে যখন তখন বাসায় আসতে বারণ করে দিচ্ছে । খুব বখে গেছে ও । শাসনের বাইরে ডেভিডের ওঠাবসা। কড়া করে আমাকে সাবধান করেছে ডেভিড যেন আমার রুমে আর না ঢোকে । কথাটা মনে পড়তেই আমি ডেভিডকে বলি , এই চল ড্রয়িং রুমে বসবি। মা দেখলে চেঁচাবে । তোর মার মাত্র একটা মুখ । দেখি কত চেঁচাতে পারে । এমন সময় মোতির মা আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলে, দাবিদ আসিছ নাকি। ও দাবিদ মিষ্টি পিঠা খাবা ? ডেভিডও খুশী হয়ে বলে শিওর মাই ফেয়ার লেডি । জলদি আন। মোতির মা ভারী হিপ কাঁপিয়ে ছুটে যায় কিচেনে। ডেভিডের পপকে মোতির মার ভারী পছন্দ। ফ্রি ফ্রি কত রকমের কত ওষুধ দেয়। ডেভিড হাসে। নিজের বাবাকে নিয়েও মজা করে, বুঝলি পপটার লিবিডো জিরো লেবেলের। নইলে কবে মোতির মা হাপিশ হয়ে যেত ! 

ডাঃ ভ্যান আমদের শহরে এসেছে বহু বছর হল । আগে পশ্চিমবাংলার কোন শহরে ছিল ওরা । মিশনারি হাসপাতালের ডাক্তার। ডেভিড ওদের একমাত্র সন্তান। আর এখানে এসে এক বাঙালি খৃস্টান মেয়েকে দত্তক নিয়েছে । নাম রেখেছে সুসান। ডেভিড ওর আইরিশ পূর্ব পুরুষ বা আত্মীয়দের তেমন চেনে না যতটা আমাদের চেনে জানে। খিস্তিতে এক নম্বর। কাঁচা নর্দমাও হার মানে ওর মুখের কাছে। একটা গ্রুপ আছে ওদের। মন্টুকাকুর দোকানে বসে ওদের খ্যাঁট। যে কোন মেয়ের ফিজিক্স একেবারে ঠিক ঠিক কি করে যেন ওরা বলে দেয়। মা চাচী দিদিরাও ওদের দেখলে অন্য রাস্তা ধরে। নইলে বিশ তিরিশ টাকা গচ্চা দিতে হয়। আর তখন শয়তানগুলো ইবলিশের বাচ্চা থেকে একবারে ফেরেশতার ভাব নেয়। কারো হাতের বাজার বয়ে দেয়, ওষুধ কিনে দেয়, রিকশা ঠিক করে আনে। চলে গেলেই পচাগলা মুখে চোখ মেরে বলে , বাষ্পটা দেখেছিস মাইরি, ঠিক যেন জব্বার হোটেলের দশ মণি ভাতের পাতিল। 

একদিন ঝোড়ো বিকেলে মা আর ডেভিডের মা এক ছাতার নীচে কোনরকমে মাথা বাঁচিয়ে মহিলা সমিতি থেকে ফিরছিল। রিকশা নেই। তাছাড়া ছোট শহরে বেশির ভাগ মানুষ পায়ে হেঁটেই চলাচল করে। মন্টুকাকুর দোকান থেকে কে যেন আওয়াজ দেয়। মুহূর্তেই মা ছাতা গুটিয়ে দোকানে যে কজনকে পেয়েছে আচ্ছাসে পিটুনি মেরেছে। ওর বন্ধুরা বৃষ্টির ভেতর যে যেদিকে পেরেছে ছুটে পালিয়েছে। আনা আন্টি নাকি ঐ সময় কয়েক হাজারবার যীশু আর মাতা মেরীকে ডেকেছে। ডেভিড যেন আজ ওদের সাথে না থাকে। ভাগ্যিস সেদিন ডেভিড আমাদের কিচেনে বসে মোতির মার সাথে ডালপুরি বানাচ্ছিল। মন্টুকাকুও ভয় খেয়ে ক্যাশ ফেলে দোকানের পেছনে চালাঘরে গিয়ে লুকিয়েছিল। আমার মার মর্দানি শহর খ্যাত। বাসায় ফিরে ডেভিডের বানানো বাঁকাতেরা ডালপুরি খেতে খেতে মা আর আনা আন্টি ডেভিডকেও আচ্ছাসে শাসন করে। শয়তানটা মা আর আন্টির সামনে ভাল মুখ করে থাকে আর আমার কাছে এসে চুপ করে জানায়, তোর মাটা হেব্বি হট রে । আমার ওল্ড পপ ত ফিদা হয়ে যায় তোর মাকে দেখলে। তুই এতো গোবরমার্কা হলি কেমনে করে ? একটা চুমু পর্যন্ত খেতে পারিস না । ওর হাত আমার গাল ছোঁয়ার আগেই ডেভিডের হিপ বরাবর লাথি ছুঁড়ে দিই। 

সারা কলেজে হইচই পড়ে যায়। ডেভিড ইংরেজিতে চব্বিশ পেয়ে ফেল করেছে। ইংরেজির স্যার বুদ্ধদেব চক্রবর্তী। খুব গম্ভীর আর মেজাজি মনের মানুষ । ডেভিডের খাতাটা প্রিন্সিপ্যালের কাছে দিয়ে দিয়েছেন স্যার। ডেভিডের পপ বা আমার বাপি তো জীবনেও সুপারিশ করবে না । অগত্যা মা আর আনা আন্টিই গার্জেন হয়ে কলেজে এলো। পরীক্ষা খাতার পাতা জুড়ে কবিতা লিখে রেখেছে ডেভিড । ইংরেজিতে লিখে তার বাংলা অর্থ করে দিয়েছে। কেবল গ্রামারগুলো ঠিকঠাক করেছে বলে চব্বিশ উঠেছে। এই প্রথম বুদ্ধদেব স্যারের হাসি মুখ দেখত পেল কলেজ। খুব নরম করে স্যার আনা আন্টিকে জানালো ইংরেজি মাতৃভাষা হলেই যে পাস করবে এমন কোন কথা নেই। প্রচুর বাঙ্গালী ছাত্রও বাংলায় ফেল করছে। তবে কবিতাগুলো সুন্দর লিখেছে। ওকে কবি হতে দিন। আনা আন্টি ক্রশ এঁকে মেনে নেয় স্যারের কথা। ঠিক হয় ডেভিডকে একটি সুযোগ দেওয়া হবে। দুই মা ডেভিডকে শাসন করে , আদর করে পঞ্চাশ টাকা গচ্চা দিয়ে পড়াশুনা করার জন্য বুঝিয়ে আসে। অনেক রাতে আমাদের দেয়ালের বাইরে ল্যাম্প পোস্টের নীচে কোরাস ভেসে আসে , পৃথিবীর কেউ ভাল তো বাসে না , এ পৃথিবী ভাল বাসিতে জানেনা--- বাপি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে, এই তোরা ঘরে যাসনি এখনো ? 

আমার ঘরের দরোজায় দুধের গ্লাস হাতে মোতির মা কেমন রহস্য করে দাঁড়িয়ে আছে। পরের দিন অর্থনীতি পরীক্ষা । মুখস্থ করে লিখছি পুঁজির সূত্র। এখন মোতির মার নায়িকা পোজ দেখার সময় নেই বলে চোখ ফিরিয়ে নিই। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আচমকা চোখ চেপে ধরল। মরণ চীৎকার দেওয়ার আগেই মাথাটা বুকের ভেতর নিয়ে মুখ চেপে ধরে ডেভিড। ছাড় শয়তান। আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুধটা খেয়ে নিয়ে মোতির মাকে বিগলিত থ্যাংকু দেয়। মোতির মা খুশিতে বিশ্বসেরা একটি হাসি দিয়ে আর কি কি খাওয়ানো যায় তাই আনতে নিঃশব্দে ছুটে যায়। যাওয়ার আগে আমাকে বলে, ভয় পাইও না । আমি আম্মুকে কব নানে। কিন্তু এই প্রথম আমার ভয় হল । মা বাপি জানলে হাড় ভেঙ্গে টুকরো করে দিবে। আমি ডেভিডকে বলি , তুই বাসায় যাস না কেন ? পড়তে হবে না? ফেল্টুস হয়ে থাকলে চলবে? কিন্তু ডেভিড কিছুই না বলে উপুড় হয়ে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকে। 

পড়া ছেড়ে বসে থাকি। রাগ হচ্ছে ভীষণ। ভয় তো পাচ্ছি ই। পড়াশুনায় আমার একটা টার্গেট আছে। অনেক দূর যেতে হবে। আর তার জন্য চাই ভাল রেজাল্ট । ওর গেঞ্জি ধরে টান দিই। আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেই শুয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে এক লাফে উঠে পড়ে। ভয়ে মুখ ঢেকে রাখি। কিছুতেই চুমু খেতে দেব না। খুব আদরে জড়িয়ে ধরে ডেভিড। তারপর চুমু না খেয়েই চলে যায়। টমির আদর মাখা গরররর শব্দ শুনি। টমি ভীষণ ভালবাসে ডেভিডকে। ডেভিডের অভিমত আমার চেয়েও বেশি। মোতির মা গরম স্যান্ডুইচ নিয়ে আহত দুঃখে বারান্দায় মিছে খুঁজে আসে। তার দাবিদ তাকে না বলে চলে গেল ! হঠাৎ মাথা ব্যথার মত একটু ঈর্ষা হয়। পুঁজির সূত্র বার বার ভুল হতে থাকে। অন্য রকম এক অনুভূতি ঘিরে ধরে। আরো কিছুক্ষণ ডেভিড থাকলে কেন যেন খুব ভাল লাগত । 

মন্টুকাকুর দোকানে সকাল থেকেই জমিয়ে বসেছে শয়তানগুলো । এই দোকানের সামনে দিয়েই আমাদের কলেজ যেতে হয়। হোস্না যেতেই আওয়াজ উঠে, চল্লিশ কাপ দুধ – তার পেছনে রোগা দীপু বুকের উপর ব্যাগ চেপে দোকান পার হচ্ছে এবার আওয়াজ আসে, আরে না বত্রিশ – বত্রিশ – ওদের বেশ পেছনে আমি আর শিফা । এবার আওয়াজটা গিলে ফেলে শয়তানগুলো। আমরা ভাবলাম বেঁচে গেছি আজকের মত। কিন্তু একটা গলা শুধু শুনতে পেলাম, বত্রিশ , তেইশ, বত্রিশ । চোখ ফেটে কান্না এলো। অন্যদিনের মত রাগ হল না। বিশ্রী রকম মন খারাপ হল । ডেভিড একা এক চোখ বন্ধ করে সিগ্রেট টানছে আর ওর সেই ভয়ংকর অশ্লীল ভঙ্গীতে দু পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম আমার মনে হল ডেভিড একটা গুণ্ডা ছাড়া আর কিছু না। কিচ্ছু হবে না ওকে দিয়ে। রাস্তায় রাস্তায় গুন্ডাবাজি করা ছাড়া আর কিছুই ও করতে পারবে না। মনে মনে মুছে ফেললাম ডেভিডকে। কাল রাতের ভাল লাগার জায়গায় ঘৃণা জাগল মনে । ফেল করুক , মরুক , বাঁচুক , দূর হয়ে যাক আমার কি ? আমাকে অনেক পড়তে হবে। জানতে হবে। জানাতে হবে এই শহরের মানুষকে । বাপি মার মাথা উঁচু হবে যদি পিএইচ করতে পারি। বাপি এক সংগ্রামী মানুষ । তার মাথার শূন্য মুকুটে আমাকে একটি নীল পালক পরাতেই হবে। পরীক্ষা খুব ভাল হল না। বুঝতে পারি টপ নাম্বার চলে যাবে আনিসের ভাগ্যে। বিকেল চলে গেল , সন্ধ্যাও । খুশী হলাম ডেভিড এলো না বলে। পরের দিন আবার সেই বত্রিশ –তেইশ—বত্রিশ আওয়াজ সাথে বিশ্রী হলুদ গেঞ্জিতে বিশ্রী ডেভিড। দিনটাই হলুদ হয়ে গেল। প্রতিজ্ঞা করি যতদিন বেঁচে থাকব কোনদিন কথা বলব না এই গুণ্ডার সাথে। হু ইজ ডেভিড ? শীট, লুজার, পথের কুত্তা, তাও লাল রং , বিশ্রী সোনালী চুল, পাইপের মত শুকনা জানোয়ার একটা । 

কালাম স্যর খাতা দিতে দিতে খুব অবাক হয়। মাত্র সাড়ে সাত । মাঝখানে আট পেয়েছে দিপু । আনিস টপার । সাড়ে আট। কেঁদে কেঁদে আমার চোখ ফুলে গেছে। ডেভিডের দেওয়া গিফটগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলি। ওর জন্যেই সেদিন ভাল করে পড়তে পারিনি। মরে না কেন শয়তানটা । লাল কুত্তা । বাপি মা তেমন কিছু না বলে শুধু বিস্ময় গোপন রাখে । আমি ডোর লক করে আরো সিরিয়াস হয়ে পড়তে থাকি । যে করে হোক আমাকে টপার হতেই হবে। পরদিন মন্টু কাকুর দোকানের দিকে তাকাই না। ওদের আওয়াজ শুনেও মনে লাগাই না। প্রতিজ্ঞা করেছি আর কোনদিন পড়াশুনা ছাড়া অন্যদিকে মন দেবো না। কালাম স্যর ক্লাসে পুঁজির সূত্রটা আবার আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্যর চলে যেতেই কে যেন ব্লাকবোর্ডে লিখে দিয়েছে , শুধু তোমার জন্য বেবস। তার নীচে এক কার্টুন মেয়ে । তার ছোট চুলে ক্লিপ আঁটা , পিঠে ব্যাগ। ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে , দ্যা ক্যাপিটাল, সেভেন আন হাফ নামের এক বই। কে বা কারা করেছে জানে সবাই। পরের ক্লাসে মিচকি হাসি দিয়ে বোর্ড মুছে বুদ্ধদেব স্যর ওথেলো পড়াতে শুরু করেন। আমি ওথেলো না শুনে জ্বলতে জ্বলতে ডেভিডকে হাজার বার খুন করলাম। বন্দুক দিয়ে ছুরি দিয়ে তরবারি দিয়ে আঁচড়ে খামচে গলা টিপে। ডে আফটার ডেভিডের পরীক্ষা । আল্লাহ্‌ ঈশ্বর ভগবান ডেভিড যেন ফেল করে। কলেজ থেকে আসার সময় দেখে এসেছি রাস্তার তিনটে কুকুরের লেজে বেলুন বেঁধে তাদের সিগ্রেট খাওয়ার ট্রেনিং দিচ্ছে শয়তান ডেভিড আর ওর সাঙ্গোপাঙ্গরা। কুকুরগুলো হাউকাউ করছে। মাথা ব্যথা করছে। কষ্ট পেলেই কেন যে আমার জ্বর আসে! তবু আমি প্রচণ্ড রাগে পুড়তে পুড়তে দেখি কুকুরগুলোর চোখের হলুদ আলো বাঘের চোখের মত নিষ্ঠুর নির্মম নিশ্চল আঠার মত ডেভিডের শরীরে লেপটে আছে। ওরা থাবা তুলছে। ওদের নখে লাল রঙ । ঠিক যেমন গোলাম মোস্তাফার মুটকি মেয়েটার নখে থাকে। এখুনি ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলবে ডেভিডকে । আমি বাঘিনীর মত তীব্র আনন্দে দুলে উঠি। আমার মাথার ভেতর প্রতিশোধের আগুন হাজার হাজার ছুটন্ত তারাবাজির হল্লা তোলে। লে ছক্কা । এইবার! মর শয়তান। 

বিশ্রী হলুদ গেঞ্জিটা ছিঁড়ে ফেলে ওরা । তিন তিনটা কুকুর কাঁধের কাছে বাঁকানো দাঁতের কামড় বসানোর আগেই আমি চেঁচিয়ে উঠি । এই উপত্যকাটা আমার ভীষণ প্রিয়। কতবার ওর পীঠে চড়ে নদী পার হয়েছি । তীরে উঠেই ঝেড়ে ফেলে নামাতে চেয়েছে ডেভিড । আমি ওর কাঁধে মুখ ডুবিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে থেকেছি। নামব না। তুই না আমার বর। উইল ইউ বি ফেইথফুল থ্রু গুড টাইমস অ্যান্ড ব্যাড, সিকনেস অ্যান্ড ইন হেলথ এজ লং এজ ইউ বোথ স্যাল লিভ ? আমার মাথাটা আরো গভীরে চেপে ধরে ডেভিড বলেছে, আই উইল। আমাকে পিঠে নিয়েই আমার জন্য কাশফুল তুলেছে ডেভিড। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র