দেবযানী বিশ্বাস - মায়াজম

Breaking

১৫ এপ্রি, ২০১৫

দেবযানী বিশ্বাস


পথের নুড়ি



আজ মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে ভানুর। সেই সকাল সাড়ে দশটা থেকেই। সেই যে নীল সাদা প্রজাপতির দল যখন তার সামনে দিয়ে ভাসতে ভাসতে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল, তখন থেকেই। 

ওই প্রজাপতির দলের মধ্যে একজনা খুব শান্ত, কেমন ভীতু ভীতু। দশজনের ঠিক মাঝখান দিয়ে সে হাঁটে। তার চোখ ছটফট করে না, হাসিতেও শব্দ ঝরে না। সবার ভিড়ে মিশে থাকতে পারলেই যেন সে বেঁচে যায়। অথচ ভানুর চোখ শুধু ভিড়ের মাঝে ওকেই খোঁজে, ওকেই দেখে।

এগারোটা বাজতেই এক এক করে বাড়ির সামনে রাখা দু দুটো উঁচু পাথর, পাঁচিল ভরে যায় বিশু, কাজল, রাণা আর সুবীর আসার পর। ভানু আজ অনেকটাই আগে চলে এসেছে। আজ বউদি তার দাদার বাড়ি যাবে, তাই কাল সন্ধ্যেরাতেই বাজারটা করে রেখেছিল ভাগ্যিস। নইলে আজও সে আসার আগেই প্রজাপতির দল ইস্কুলে ঢুকে যেত।

“আজ দুদিন ধরে বিল্টুকে দেখছি না যে। কোথায় গেল শালা?” পাঁচিলের গায়ে লাফ মেরে উঠতে উঠতেই কথাটা বলল কাজল।
“ বিল্টুটার বড় চাপ যাচ্ছে। ওর কাকিমার মায়ের জন্য দু দিন ধরে রাত জাগছে হাসপাতালে। এমনি সময় কথা বলে না কাকিমা, বরং এর তার কাছে ওর নামে চুকলি কেটে বেড়ায় আর কাজের সময় এলে তখন বিল্টুর খোঁজ। পারে মাইরি।“ ভানু তির্যক স্বরে উত্তর দেয়।
“ ঠিক বলেছিস গুরু। আমাদের দু দণ্ড বসে থাকতে দেখলেই লোকেদের যত কাজের কথা মনে পড়ে যায়। পরশু দিন কেরোসিন তুলে ফিরছি, শান্তাদি এসে মিষ্টি হেসে বলল , আমার বোনের মেয়ের জন্য সারদা স্কুল থেকে ফর্মটা একটু তুলে এনে দেবে বিশু? খুব উপকার হয় তাহলে।“

কে? ওই ঢঙি শান্তা? ও না আমাদের রক থেকে ওঠানোর জন্য সকাল সন্ধ্যে কাজের মাসীকে দিয়ে জল ঢালিয়ে রাখত?” রাণা বিশুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ছোঁড়ে।
বিশু আমতা আমতা করতেই কাজল বলে, “ আরে হ্যাঁ রে, আর তার বোনের মেয়ের জন্য এই শালা চললো ফর্ম তুলতে। নির্লজ্জ বেহায়া কোথাকার!”
বিশুর মুখ কাঁচুমাচু। রাণার কড়া হাতের চাটিকে বেশ সমীহ করে বিশু। সকলের থেকে সেই একটু মাথামোটা, বিশু জানে সেটা। পড়াশোনায় দুবার বারো ক্লাসে গোত্তা খেয়ে ইতি টেনেছে। বন্ধুরা যে তাকে ভালোবাসে, এক আসনে বসায়, তাতেই কৃতার্থ বোধ করে সে। একটু হাসি টেনে বলে, “ একবার ভাবলাম জানিস, সোজা মুখের উপর না সেঁটে দি। কিন্তু তারপর ভাবলাম, মাসীটা শালা ধান্দাবাজ, বাচ্চাটা তো নয়। বসেই তো থাকি, এনেই দিই।“ বিশু যেন কৈফিয়ৎ দিল।
“তা বেশ করেছিস। কিন্তু আসা যাওয়ার পয়সটা দিয়েছিল তো, নাকি সেটাও নিজের গ্যাঁট থেকে খসালি?” ভানু জানতে চায়।
“আরে না না, সেটা দিয়েছে। অতটাও খারাপ না মাইরি।“ কান অব্দি হাসে বিশু।
“কে জানে! তোকে বিশ্বাস নেই।“ নির্বিকার গলায় বলে উঠল ভানু।
এদের মধ্যে রাণা সব থেকে হ্যান্ডসাম। ফরসা, লম্বা, চোখে সরু ফ্রেমের চশমা। প্রতিদিন হাতে পুঁতি বা পাথরের রিস্টলেট পাল্‌টে পাল্‌টে পরে। চেহারাতে বড়োলোকি ছাপ। পয়সাওয়ালা ঘরের ছেলে তো বটেই, বাবা বড় কাঠের ব্যবসায়ী। পড়াশোনাও করে ফেলেছে বেশ খানিক। অনার্স গ্র্যাজুয়েট। কিন্তু একটু ছন্নছাড়া, জীবন নিয়ে ভাবনা কম। তাই সকাল গড়াতেই প্লেট ভরে লুচি তরকারী খেয়ে মোপেড বা সাইকেলে চেপে চলে আসে; জীবেন বাবুদের পাঁচিলের গা ঘেঁষে বসে পড়ে আড্ডা দিতে। আসা যাওয়ার পথে চুলবুলে মেয়েগুলো রাণার দিকে আড়ে আড়ে চায় আর একে তাকে কনুই দিয়ে ঠেলা মারে। রাণার অবশ্য সেদিকে নজর নেই।

কিন্তু বিশু তাই দেখে দেখে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে পারে না। “কি কপাল মাইরি তোর, রাণা। দুধে ভাতে থাকিস, লাল্টুস মার্কা চেহারা, মেয়েরাও তোর জন্য ফিদা। আর আমাদের দেখ, নেংচে নেংচে দিন কাটাচ্ছি।“
“আর ফাই ফরমাস খেটে।“ মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখে ফোড়ন কাটে সুবীর।
“তা আর বলতে, উঠতে বসতে ভাতের খোঁটা, কাজের খোঁটা, চরিত্রের খোঁটা।“ বাকিটুকু শেষ করল কাজল।
প্রতিদিনই হাজার গল্পের ফাঁকে এই ভাগ্যের পরিহাস একটা জায়গা জুড়ে থাকে ওদের। কোনদিন হাসির ছলে, কোনদিন গম্ভীর আলোচনায়। রাণার ভালো লাগে না; বন্ধুদের মন ভার মুছে দিতে ইচ্ছা করে ওর, বাবাকে এর মধ্যেই বলেছে বিশুর জন্য একটা কাজের কথা, কিন্তু মুখে বলে, “ দূর, আর আসব না, তোদের এই প্যানপ্যানানি রোজ রোজ ভাল্লাগে না মাইরি। মনে হয় যেন পাপ করেছি বড়োলোক বাচ্চু সাহার একমাত্র ছেলে হয়ে।

ভানুরও আজ ভালো লাগে না এই আলোচনা। সকালের ভালো লাগাটা কেমন যেন মিইয়ে গেল নিমেষে। সত্যিই তো, দু পয়সা ঘরে না ফেলে তিনবেলা খ্যাঁটন চাইলে বাড়ির লোক তো পিষবেই। কিছু একটা করতেই হবে। মনে মনে কেমন একটা অস্থিরতা বোধ করে সে। কতদিন দাদা আপিস করে, আপিসের শেষে টিউশন করে আর সংসার চালাবে? নেহাত সীতার মত এক করুণাময়ী বৌদি আছে ঘরে, ঝড় ঝাপটা এলে সেই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ভানুর সামনে। নতুবা কবে ঝড়ের ধাক্কায় ফুটে যেত সে। পথেই ঠিকানা খুঁজে নিতে হত।
সুবীর আজ মন দিয়ে মোবাইলে গেম খেলছে। হাজার খানেক দিয়ে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ভালো মোবাইল কিনেছে সে। দুটো টিউশন করে, নগদ পনেরোশো টাকা পায় মাস গেলে। বন্ধুদের কথা গুলো তার কান ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে, কিন্তু উত্তর দেবার অবস্থায় নেই। গাড়িটাকে সব ধাক্কা থেকে বাঁচিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতেই হবে। একটু মন হারালেই দুর্ঘটনা।

এভাবেই চলে রকবাজি। দিনের নানা সময়ে মুখগুলো শুধু বদলে যায়। বিকেল নামতেই বয়স্ক মানুষের দল এসে বসেন; গল্প রাজনীতি, শারীরিক সমস্যা, সামাজিক অবক্ষয় হয়ে সংসারের অভাব অভিযোগে গিয়ে দম ফুরায়।
সন্ধ্যে রাতে আবার পাঁচ সাত জোড়া পা আর তিনটে সাইকেল একসাথে হতেই হই চই শুরু হয়ে গেল ক্রিকেট নিয়ে। চাকুরে রাকেশ আপিস থেকে ফেরার পথেই দাঁড়িয়ে গেল সেখানে। “আজ খেলার খবর কি রে?” কেউ উত্তর দেওয়ার আগেই যোগ করল, “ যা কাজের চাপ, মাথা তুলতে পারি নি একটুও, কোহলি কেমন খেলল?” “এই তো, সাতাত্তরে আউট।“ দায়সারা উত্তর দিয়ে এড়িয়ে গেল কাজল। মনে মনে গাল পাড়ল; “শালা, এই ব্যাটার জন্য আমার জীবনটা ছ্যাদড়া হয়ে গেল, সারাদিন মা রাকেশের উদাহরণ টানবে আর জ্বালাবে। শয়তানটা ঠিক এসেছে এখানে কাজের কথা শোনাতে, খেলাটা ছুতো। হাড়ে বজ্জাত!” রাকেশ কাজলের দুটো বাড়ি পরেই থাকে, কাজলের থেকে মাত্র এক বছরের বড়।

ভানুও জমে উঠেছিল আলোচনায়, কিন্তু মনটা হঠাৎ দলছুট হয়ে গেল। আধ মিনিট আগেই এই পথ দিয়ে প্রজাপতিকে ব্যাগ কাঁধে ধীর পায়ে ফিরতে দেখেছে সে। একটা সাদা কমলা সালোয়ার কামিজে, চোখ নিচু করে, একা একা। সেই ইস্তক ভানুর মন আনচান। ওর বাড়ির লোকেরা কেমনতর! মিষ্টি মেয়েটাকে এই সন্ধ্যেরাতে একা একা পথে ছেড়ে দেয়! চিন্তাটা মাথায় আসতেই গল্পের সুর কেটে গিয়েছিল তার।

বিশু সেদিন বলছিল বটে, “ওই মায়ের এমন মেয়ে ভাবা যায় না মাইরি। মা টাকে দেখেছিস? তাল তাল চর্বি নিয়ে পাছা বুক দুলিয়ে হাঁটে। যেন কোন অপ্সরী নামলেন।“
বিশুকে থামিয়ে দিয়ে সুবীর বলেছিল, “আরে, তুই কি ভাবছিস ওটা মেয়েটার নিজের মা? সৎ, সৎ, সৎ মা। বাবাটা একটা মিচকে বুড়ো, এক নম্বরের হারামি। লোকটা আগের বউটাকে মেরেই ফেলল, তারপর টাকা পয়সা ঢেলে সব ধামাচাপা দিয়ে দিল। আমাদের বাড়ির কাজের মাসী তো ওই পাড়াতেই থাকে, ওরা সব জানে।“
“বলিস কি! উৎকণ্ঠায় মুখ দিয়ে কথাটা ছিটকে বের হল ভানুর।
“ তবে আর বলছি কি। এটা বজ্জাতটার দ্বিতীয় বউ। সারাদিন দেখবি সেজেগুজে গা এলিয়ে বারান্দায় বসে আছে। শুনেছি, মেয়েটাকে বড্ড কষ্ট দেয়।“
মেয়েটার কষ্ট যেন ভানুর বুকে গিয়ে লাগে। “কি করে? মারে?”
“অতশত জানি না, তবে ভাল ব্যাভার করে না এটা শুনেছি।“
সুবীর কথাটা শেষ করতেই ভানুর অস্থিরতা শুরু হয়েছিল মনের মাঝে। এত শান্ত ভাল মেয়েটাকে কেউ কষ্ট দিতে পারে? ভাবতেই পারছিল না ভানু। এর একটা বিহিত দরকার, কিন্তু কি ভাবে? ভাবনার মাঝেই বিশু ভানুর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছিল, “ তুই মেয়েটাকে খুব ভালোবাসিস, না রে ভানু?”
চোখটা সরিয়ে নিতে নিতে আলগোছে জবাব দিয়েছিল ভানু, “ কি যে বলিস। চাল নাই, চুলা নাই, ভালোবাসলেই যেন হল।“
কথাগুলো মনে আসতেই ভানু ছটফট করে উঠে দাঁড়ায়; রাণা এক গাল হেসে বলে, “ যাও বডিগার্ড, ডিউটি সেরে এসো। আমরা ততক্ষণে ডালবড়া আর চা অর্ডার দিয়ে আসি ।“
“শুধু ডাল বড়া না, সাথে ভাঁড়ের গরম চা আর দুটো সিগারেটও আনিস রাণা। একটু সুখ টান দিই।“
পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে একটা পঞ্চাশের নোট বার করতে করতে রাণা বলল, “শালা জমিদার এসেছে যেন। সিগারেট হবে না, বিড়ি ফোঁক।“
প্রতি বুধবার আর শনিবার এই একটা ডিউটি খুব যত্ন করে পালন করে ভানু। তাও রাণার কথায় একটু লজ্জা পেল; কিন্তু উঠেও দাঁড়াল। কেমন যেন আশংকা হয় মেয়েটার জন্য। কেই বা হয় তার? কেউ না। তবু ওর মায়ায় ভরা মুখটা দেখলেই মনে হয়, ওই মেয়েটার জন্যই তার নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো উচিত।
একটু দূরত্ব রেখেই মেয়েটার পিছন পিছন হাঁটে ভানু। ও পাশে গিয়ে দাঁড়ালে যদি প্রজাপতি ভয় পেয়ে যায়, যদি এক ছুট্টে উড়ে চলে যায়! তার থেকে এই বেশ।

ষষ্ঠীতলার মোড় বেঁকতেই বটতলা থেকে দুজন কাঁচা খিস্তি ছোঁড়ে একে অপরের দিকে। একটা মোটর বাইক দাঁড় করানো সামনে। মোটর বাইকের পিঠে চেপে কান ঢাকা বাবরি চুলওয়ালা একটা ছেলে হিস হিস্‌ শিস বাজিয়ে হাত ছড়িয়ে বলল, “ হায় হায় মল্লিকা, মুঝে ছোড়কে মত যাও। তু মেরি হ্যাঁয়, জান।“ পাশের অসভ্য ছেলেটা খ্যাঁক খ্যাঁক হেসে উঠল, “তোর একার? ইল্লি আর কি।“
প্রজাপতি কেমন যেন সিটিয়ে গেল, যতটা পারল সরু রাস্তার অপর পাশে সেঁটে গেল। পা চালাল দ্রুত; যেন এই পথ পেরিয়ে গেলে দম ফেলবে সে। হাঁটার গতি বাড়াল ভানুও। এই জায়গাটা মোটেই নিরাপদ নয়। বেশ কয়েক গজের মধ্যে কোন দোকান পাটও নেই। কেমন ছায়া ছায়া অন্ধকার। অনেক সুপারিশ করেও ভালো আলোর বন্দোবস্ত করা যায় নি। একবার দু বার বড় আলো লাগানো হয়েছিল বহুদিন আগে, কিন্তু কারা যেন ঢিল মেরে ভেঙে দেয় বারবার, তাই এখন টিম টিমে বাল্‌ব জ্বলে। পাশেই একটা পরিত্যক্ত গুমটি ঘরে নিত্যদিন জুয়ার আড্ডা বসে। দেশি মদের গন্ধে ভুরভুর করে চারপাশ।

হঠাৎ বাইকটা স্টার্ট দিল। রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরিয়ে পিছু নিলো প্রজাপতির, খানিক আস্তে আস্তেই। সাথে হাওয়ায় উড়তে থাকল কু প্রস্তাব। বাইকের পিছনে বসে খেঁকশিয়াল মার্কা ছেলেটি চুলে বিলি কাটতে লাগল। ভানু চটপট পকেট থেকে বের করে ফেলল বউদির বাতিল মোবাইলটা, ধরে ফেলল রাণাকে, “জলদি আয়, বটতলায়।“
ভানু এক দৌড়ে বাইককে পাশ কাটিয়ে প্রজাপতির পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। পায়ের শব্দে এক ঝটকায় পিছনে ফেরে প্রজাপতি; থমকে দাঁড়ায়, জড়ানো গলায় আঙুল তুলে দেখায়। ওর অস্ফুট আর্তনাদ ভানুর বুকে গিয়ে ধাক্কা মারে, ‘ ভয় নেই, এগিয়ে যাও, আমি আছি।“ কথাটা শেষ হতেই বাইকের মুখোমুখি হয় সে।
“আরি ব্বাস! এই প্যাংলা আবার কোথা থেকে এল রে?” খিক খিক হাসে খেঁকশিয়াল।
“হঠ্‌ যা শালা রাস্তা থেকে, জানে বাঁচতে চাস তো-“ বাইকটা দাঁড় করিয়ে লাফিয়ে নামে বাবরি চুল।
মেয়েটা পালায় না; ভানুর জামা খামচে ধরে পিঠের কাছে মুখ লুকায়। যেন এই দুঃসময়ে ভানুই তার এক মাত্র ভরসা। আসতে যেতে পথের ধারের এই মুখ তার চেনা। টুকরা টাকরা কথা ভেসে আসে ঠিকই, কিন্তু বিপদের গন্ধ আসে না। এই মুহূর্তে ভানুকেই বড্ড আপন লাগে তার।
ভানু বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়। একটা ভয়ার্ত কোমল হাতের স্পর্শ তার সাহস দু গুণ বাড়িয়ে দেয়। মনে হয়, এটাই হওয়ার ছিল একদিন, আজ না হোক কাল।
জুলপিধারী দু পা এগিয়ে আসে আরো, বলে, “ তুই কে বে? টুপ করে মাঝখানে খসে পড়লি? টুসটুসে মাল দেখে লোভ সামলাতে পারিস নি বুঝি?”
খবরদার! আর এক তাও নোংরা কথা নয়। জিভ টেনে ছিঁড়ে দেব।“ রাগে চোয়াল পেষে ভানু।
“তাই নাকি? ছেঁড় তবে। জিভটা বের করে কুৎসিত হ্যাঁ হ্যাঁ হাসি হাসতে হাসতে পা ঘষটে ঘষটে এগিয়ে আসে সাগরেদ। ভানুর গা ঘিন ঘিন করতে থাকে। পাশ দিয়ে একটা মাতাল গাইতে গাইতে চলে যায়, ‘সারে দুনিয়াকা বোঝ হাম উঠাতে হ্যাঁয়...”
আচমকা পিছনে হই হই শব্দ ওঠে। সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দে চমকে উঠে পিছনে তাকায় বাইক-ধারী। লাফ মেরে চেপে বসে বাইকে, চিৎকার করে ডাকে, “ বাদলা উঠে আয়।“
বাদলা এক ছুট্টে কোনক্রমে বাইকে পিছন ঠেকাতেই হুস করে বেরিয়ে গেল সেটা। সাইকেল থেকে নেমে রাণা বলে, “ যাচ্চলে, ভেবেছিলাম আজ একটু হাতের সুখ করে নেব, শালা ফসকে গেল!”
বিশু তিনপাক ঘুরে সুর তোলে, “ভেগেছে ভেগেছে। তোর হাতের গুলি দেখে রে রাণা।“
“দাঁত কেলাস না তো।“ রাণার ধমকে চুপ করে যায় বিশু।

মেয়েটা তখনও সিটিয়ে। জামাটা ছেড়ে ভানুর পাশে দাঁড়িয়ে তিরতির করে কাঁপছে যেন। ভানু রাস্তা থেকে বইয়ের ব্যাগটা হাতে তুলে নেয়, বলে, চল, বাড়ি দিয়ে আসি। রাতের বেলা এ পথে একা একা ফিরো না। আমরা তো আছি, ডেকো। প্রজাপতির তখন চোখ ভরা জল; ভানুর মুখের দিকে তাকাতেই টুপ করে এক গালে গড়িয়ে পড়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র