রৌপ্য রায় । - মায়াজম

Breaking

১৫ এপ্রি, ২০১৫

রৌপ্য রায় ।

।। এক অশরীরী ।।


বেশ কিছু দিন আগের কথা । এক অশরীরী সাথে আলাপ হয়েছিল বট তলার চৌরাস্তার মোড়ে । প্রথমে একটু ভয় পেলে ও কাঁপিনে । আমি একটু ভদ্র গলায় জিজ্ঞাস করলুম - 
আপনি কি অশরীরী ?
একটু ও বিচলিত না হয়ে বিনা দ্বিধায় উত্তর এল- - হ্যাঁ ।
অশরীরীর উত্তর এ মনে অল্প হলে ও সাহস পেলুম । তবে ভয় কটে নি আমি বললুম -
আপনি আমার কিছু করবেন না তো ।
" না । আমি তোমার ক্ষতি করতে যাবো কেন . '' 
এবার আমি একেবার নিশ্চিন্ত । যাইহোক অশরীরীর সাথে আলাপ তো হল । তবে একটু গল্প করলে ক্ষতি কী ভেবে আগ বাড়িয়ে বললুম -
তুমি কোথায় থাকো ?
- " তোমাদের মতো তো আমার শরীর নেই তাই বাতাসের সাথে মিশে থাকি . '' 
- কেন ? তুমি পোড়বাড়ি কিংবা গাছে থাকো না । 
- " পাগোল ! আমরা গাছে থাকতে যাবো কেন ? গাছে কারা থাকে বানর কিংবা হনুমান । আমার কি তোমার বানর না হনুমান বলে মনে হয় । '' 
- কী বলব ভেবে পাছিলুম বললুম না না । কিন্তু লোকে যে বলে অশরীরী গাছে বা পোড়বাড়িতে থাকে ? 
- " লোক ! মানুষ হল গাধার থেকে ও সবচেয়ে বড়ো বোকা । এই ধরো একজন যদি বলে ওই গাছে ভূত আছে , সেটা গোটা পাড়া বিশ্বাস করে নেবে । "
আমি এদিক ওদিক ভেবে কোন উপায় না পেয়ে অশরীরীর কথায় সম্মতি জানালুম ।
আচ্ছা তোমরা লোকের ক্ষতি করো কেন ?
- " কোন গাধা বলেছে আমরা মানুষের ক্ষতি করি ? "
- " কে আর বলবে ? জানো না বাতাসের ও কান আছে । ওই যে পাড়া বৌ গুলো কলে তো যেন জল আনতে যায় না । পাড়া গোড়ানো গল্প ডাবোরে করে নিয়ে যায় । এর কানে ফিসফিস তো ওর কানে ফিসফিস । আর কলের পাশে আমার বাড়ী । বুঝতেই পারছ কানে তো আসবেই ।"
ওরা ভুল বলে । আমারা তোমাদের ক্ষতি করতে যাবো কেন ? তাছাড়া তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই । কারণ কি জান ? "
- না 
-" কারণটা আর নয় তোমাদের শরীর আছে আমাদের নেই । তবুও একটা কথা মানতে হবে তোমাদের সাথে আমাদের এক গভীর আকর্ষণ আছে । আর যাইহোক আমাদের তো একসময় তোমাদের মত যৌবন ভরা শরীর ছিল। '' -- বলে অশরীরী বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ।
আমি নীরবতা ভেঙে বললুম - - মানুষে সাথে তোমাদের ঠিক কেমন টা গভীর আকর্ষণ ?
অশরীরী একটু কাছে সরে এসে বলল - '' এই ধরো মাঝে মাঝে তোমাদের সাথে দেখা করার ইচ্ছে হয় । কেন জানি না হয়তো কুদরত কি কারিশমা । কিন্তু তোমাদের সাথে দেখা করে ও শান্তি নেই । '' 
- কিন্তু কেন ? 
- " কিছু আজব পাঁঠা আছে দেখেই কাঁপে,ভয়ে পালায় অনেকে আবার হৃদপিণ্ডের ব্যাক ফেল করে আবার কিছু এক্সট্রা পাকা লোক আছে । যেমন ধরো,একজন এক্সট্রা পাকা লোক রাতবিরেতে বাড়ি ফিরছে , কোন কারণবসত হঠাত্‍ দেখা হয়ে গেল । ব্যাস কেল্লাফতে পরের দিন সক্কাল হতেই গুণিন ওঝা ডেকে একাক্কার । আমাদের কাবু করার চেষ্টা করে । কিন্তু ওই গাধা গুলো এটুকু জানে না যে গুণিন ওঝার চোদ্দগুষ্টি এলে ও কচুপোড়া আমাদের কিছুই করতে পারবে না । মাঝখান থেকে গুণিন ওঝা লাভ বুঝে নেয় ।"
- " কেন? গুণিন -ওঝারা তোমাদের কিছুই করতে পারে না কেন ? ওরা তো কত কি না মন্ত্র জানে । 
-" ওরা কচুপোড়া জানে । যদি ওঁ বিরিং বিরিং ফাট বলে অশরীরী কাবু করা যেত তাহলে আমদের তো আর অস্তিত্ব থাকত না । আসল ব্যাপর কি জানো তোমদের জগত আর আমাদের জগত সম্পূর্ণ আলাদা । সব কিছুই ভিন্ন ।"
- সম্পূর্ণ ভিন্ন বলতে ! 
- " সম্পূর্ণ ভিন্ন বলতে-তে-তে-তে "
অশরীরী কিছু সময় মাথা নেড়ে আনমনে কিছু একটা ভাবতে লাগল । অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি পা টা খুব ব্যথা করছিল এই সুযোগে একটু সামন এগিয়ে গিয়ে বট গাছের বাঁধাই করা বেদিতে গিয়ে বসলুম । তখন ও অশরীরী মাথাটা এদিক ওদিক নাড়াচ্ছে ।
আমি একটু ইতস্তত হয়ে বললুম - কি গো কি হলো চুপ করে গেলে যে ?
- "কি আর হবে কিছুই হয় নে ! "
- তাহলে চুপ করে আছো কেন ? 
- " ভাবছি "
কি ?
- "কিছু না । যা বলছি শোনো - সম্পূর্ণ ভিন্ন বলতে একে বারে আলাদা । যেমন ধরো তুমি তোমার গ্রহে আছো আবার অন্য গ্রহে অন্য প্রাণী আছে । তুমি তোমার গ্রহের ভিন্ন প্রাণীর বর্ণনা দিতে পারবে কিন্তু তুমি ওই ভিন্নগ্রহী প্রাণীর বর্ণনা দিতে পারবে না আবার ক্ষতি ও করতে পারবে না । কেবল কল্পনা করতে পারবে । কারণ কি জানো ওরা সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে জীব । ঠিক আমাদের মত ।আমারা পৃথিবীতে আছি ঠিক ই তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে " ।
- হুম বুঝলুম । আমার মনে একটা প্রশ্ন বেশ খোঁচা দিচ্ছিল । কেউ কে কোন দিন এ বিষয়ে জিজ্ঞাস ও করি নি । কারণ যদি কারোকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাস করি সে বলেই বসবে তুই বেটা নাস্তিক । তাই সাত পাঁচ ভেবে প্রশ্ন টা মনে কোটরে আটকে রেখে ছিলাম । আজ অনেক দিন পরে যোগ্য লোক পেয়েছি । তাই এ সুযোগ হাত ছাড়া না করে বলে ফেললুম --- আচ্ছা ইহ লোক পরলোক বলে কিছু আছে ? ওই যেমন
মৃত্যুর পরে । ই এ কি যেন বলে । হ্যাঁ , স্বর্গ নরক ! 
অশরীরী একটু হতাশ হয়ে বলল " স্বর্গ-গ-গ নর-র-রক ! তোমাকে একটা গল্প বলি শোন । '' 
আমি কান দুটোকে খরগোসের মত খাড়া করে বললুম বলো শুনছি । অশরীরী গল্প শুরু করল - 
" আমার জন্ম ১৯৪১ সালে এক অজ পাড়ওগাঁয়ে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে , খুব দারিদ্রে সঙ্গে বড়ো হয়েছিলুম । বাবা ব্রাহ্মন তাই সর্বত ভগবানের উপাসনা করতুম । কিন্তু ভাগ্যের কি বিড়ম্বনা দেখ সবে পূর্ণ যৌবন
ছুঁই ছুঁই কিন্তু ছোঁয়া আর হল না মাত্র সতেরো বছরে মারা যাই । মরে ও শান্তি পেলুম না । চেনা জানা কেউ নেই । এতো ভগবানের উপাসনা সব বৃথাই গেল । কোথায় নরক আর কোথায় স্বর্গ । কিছু ই দেখলুম না । কেবল একটা পরিবার আছে । কিন্তু সেখানে কোন বাবা নেই মা নেই ভাই নেই বোন নেই সেখানে কোন
পৈত্রিক কিংবা মাতৃক সম্পর্ক নেই । কেবল সবাই যে যার মত সে যার । "
দেখতে দেখতে রাত প্রায় শেষ হয়ে এল । দুয়েকটা পাখি ও ডাকতে শুরু করেছে । কথায় কথায় যে রাত কেটে গেছে বুঝতে পারি নি । আমি সবে কিছু বলতে যাব অমনি অশরীরী বলল-
" এবার আমার আসতে হতে , সূর্যে আলো যে গায়ে সয় না " ।
- আচ্ছা , তাহলে আবার কবে দেখা হবে ? 
" সেটা তো সময় বলে দেবে । "
অশরীরী নিমেষের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । আমি আর দেরি করলুম নি বাড়ি ফিরতে । এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে । প্রতি রাতে বট তলার চৌরাস্তার মোড় দিয়ে বাড়ি ফিরি । কিন্তু অশরীরী , সেটা তো সময় বলে দেবে ।।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র