সহেলী রায় - মায়াজম

Breaking

১৫ এপ্রি, ২০১৫

সহেলী রায়

প্রেমিকার ডান হাত আমরা গলায় রাখি



লাল, নীল, সাদা, সবুজ হরেক রঙের গোল গলা, ভি গলা, কলার ওয়ালা শার্ট, টি শার্টের পোর্টফলিও হয়ে পাড়ার মোড়ে যৌবন ঘামে মাতি, পত পত করে তেরঙ্গার মত উড়ি আমরা আসলে রকবাজ। বেকারত্ব আমাদের একচেটিয়া অধিকার। আঃবুলিশ কিছু স্বল্প চাকুরেও আছি তবে ওগুলো সান্ত্বনা পুরস্কার। রাজনীতি, মহাকাব্য, সাহিত্য, কবিতা, ফুটবল, ক্রিকেট মায় বন্ধুর বোন, বোনের বান্ধবী, এ পাড়ার দাদা, ও পাড়ার বৌদি সবি আমাদের প্রথম পাঠের মতই ঠোঁটের কোণায় ঝিলিক মারে তবু সিনিয়র সিটিজেন (বিশেষত কন্যাদায়গ্রস্ত) কাকু জেঠুদের কাছে আমরা ‘চোখের বালি’ সিরিয়ালের নায়ক। 

নায়ক শব্দটা আসতেই মনে আসে কারা যেন আত্মকথনের ঢঙে বলে দিচ্ছে ছায়াছবির পুরস্কার জেতার গল্প। আমরাও বলি, নিজেদের নিয়ে কত ব্যঙ্গ, হাসতে হাসতে উগড়ে দি যত কাঁচা কাঁচা স্বপ্ন। বুদ্ধিজীবীরা পেলে স্যাটায়ার তকমা দিয়ে বেচে দিতেন কোন পাবলিকেশন হাউসে। আমরা অবশ্য কেনা বেচা লাভ ক্ষতির ঊর্ধ্বে আমাদের জগত রচনা করি বীরদর্পে। 

বীর, রকবাজ, হিরোইসম কেমন যেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বেঁধে আছে পরস্পরের সাথে। আমাদের বুকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এসব শব্দ কারণ রক্তের রঙ লাল। মাসদুর চাচার বুকে ব্যথা উঠলে আইএসডির ঘণ্টা বেজে বেজে ক্লান্ত হয়ে যায় তাঁর প্রবাসী ছেলের ভাষ যন্ত্রে। ব্যস্ততা, হ্যাঁ ব্যস্ততা তো থাকবেই আর আমরা রক্ত দিয়ে ফিরব রাত ভোরে। কয়েকদিন চোখগুলো সম্ভ্রম দিয়ে মেপে নেবে আমাদের। তারপর আবার সেই ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’। গতানুগতিক ঠোঁট আর চায়ের ভাঁড়ের তেতো চুমু আর আমাদের রোজনামচা। 

কিছু নরম ঠোঁটও স্বাদ নিয়েছিল আমাদের। তবে সেসব সহজেই অতীত হয়েছে রক চাকুরেদের ভবিষ্যৎ জেনে নিয়ে। জিন্সের ব্যাক পকেটে মানি ব্যাগে গচ্ছিত থাকে আমাদের দীর্ঘশ্বাস। যত্ন করে প্রেয়সীর হাত থাকে মাল্টি ন্যাশনালের কোমরে। তারপরের পৃথিবী আমাদের অজানা। তবে মাঝরাতেও কেউ ঘরে না ফিরলে আমাদের দরজায় করাঘাত জুটে যায়। আমরা হাঁ মুখে তাকিয়ে দেখি মলাটে, পোষাকে, মুখোশে আরও কিছু অনুপ্রাসের ত্রাসে সূর্য ডুবে যায় পড়শির ছাদ ঘেঁষে।

ছাদে উল্টোনো সূর্য সন্ধে নিয়ে নামে আমাদের মজ্জায়। আমারা সেজে উঠি বাজপাখির চোখ নিয়ে। চোখাচোখি হতেই ওড়না গোছানো মেয়ে দেখি। স্কুল দেখি, শিশু দেখি, শ্রমিকের রাস্তা পারাপার দেখি। বিদেশ থেকে প্রাক্তনীরা এলে বুকে জড়িয়ে নেয় আমাদের। ওরা নাকি মিস করে আমাদের অন্তহীন শৈশব। দুর্গা পুজো ঢাকের বোল রসে বশে কাঁধে কাঁধ মিলে যায়। তারপর আবার পরিযায়ী পাখি। অভিভাবকের দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় ঐ দেখ উড়ে গেল এ এঁদো গলি ছেড়ে। কেউ বুঝতেও পারে না বুকে ব্যথা হলেও ভাঙবে না সেসব ঘুম। টাইমজোনের ফারাক। 

ফারাকের কথা থাক। বিশ্বকাপ থেকে মোমবাতি জ্বালানো সব উৎসবই আমাদের প্রিয়। মানুষের চোখ, প্রেয়সীর ঠোঁট, রক্তের রঙ, বাবার ধরে থাকা আঙুল , মায়ের জল ভরা হাসি আরও অনেক না শেষ হওয়া তালিকা আমাদের আস্তানায় প্রিয় রঙ আনে । রক বল বা ঠেক সবটাই আমাদের মত করে আমাদের বোঝে। বিশ্বাস আর ঘাতক হাত মেলায় না এ বেলাভূমিতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র