সৌমিত্র চক্রবর্তী - মায়াজম

Breaking

১৮ মার্চ, ২০১৬

সৌমিত্র চক্রবর্তী

                                            বিপন্ন ভুতসাম্রাজ্য






ভুতকুলে শোরগোল পড়িয়া গিয়াছে। ভৌতিককরণে করিডোরে স্ব স্ব গোষ্ঠীর বিবদমান কিম্ভুত, অদ্ভুত, গোভুত সকল ইতস্তত সঞ্চরমান।
ক্রমশ প্রকাশিতব্য গোপন বৈঠকে ভুতপ্রধানের সভানেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় ভুতগণ ঘর্মাক্ত কলেবরে টাক চুলকাইতে চুলকাইতে দেঁতো হাসি সহ আপন আপন পদ রক্ষা করিবার বাসনায় মগ্ন।
ঘোর সমস্যায় জর্জরিত ভুতসাম্রাজ্য। গোপন সংবাদ বহিয়া দূত আসিয়াছে। নৈর্ঋত কোনের জিলানগরে পরাজিত পূর্বতন মনুষ্যরাজের অনুচরবৃন্দ বিদ্রোহ ঘোষণার কূট প্রচেষ্টায় গোপনে সঙ্ঘবদ্ধ হইতেছে, যাহার ফলস্বরূপ উক্ত স্থানের দুটি ভুতুরেমাঠ, একটি পচা জলা এবং শতাব্দীপ্রাচীন এক বটগাছ বর্তমান ভুতপ্রধানের দলের হাতছাড়া হইয়া গিয়াছে।

আর কিয়ৎকাল পরেই অনুষ্ঠিত হইতে চলিয়াছে ভুতকুলের নিম্নবর্গীয় নির্বাচন। উহাতে এই ভয়ংকর সংবাদ কি কি প্রকার প্রভাব ফেলিতে পারে তাহাতেই সভাস্থ ভুতরাজপারিষদবর্গ মস্তকের অবশিষ্ট কেশরাশি,থুতনির আদরে লালিত ফরাসি কায়দার দাড়ি ছিঁড়িয়া ফেলিবার উপক্রম।

বাহিরে সমর্থক দলের নেতৃস্থানীয়দের চেহারা রীতিমত দর্শনীয়।কাহারও ঢ্যাঙা গলা, কাহারও গলার চিহ্নই নাই। কাহারও বাহিরে সারি ও বেসারি দাঁত শোভাবর্ধন করিতেছে, কাহারও রক্তজবার ন্যায় চক্ষু দেখিয়াই বুঝা যায় যে তিনি ঊষাকাল হইতেই মদ-অন থাকেন।কেহ মনুষ্যকুলকে বিতাড়িত করিয়া জমি ও বাড়ী দখল করিয়া সেখানে ভৌতিক পরিবেশ রচনায় সিদ্ধনখ, আবার কেহ মনুষ্যহন্তায় সবিশেষ পারদর্শী।

ইহারা আপন আপন গোষ্ঠীর নেতাদের ন্যায় সর্বদা পরস্পরের সহিত বিবদমান। যে যাহাকে পারে সুযোগ পাইলেই টপকাইয়া দিয়া মনুষ্য করিয়া দেয়। কিন্তু একস্থানে ইহারা সকলেই একমত, যেকোন প্রকারে মনুষ্যকুলের বাড়বাড়ন্ত রুখিয়া ভুতকুলের সাম্রাজ্যের বিবর্ধন করিতেই হইবে। অন্যথায় এই সুখের সংসার ছারখার হইয়া যাইবে।

বহুকষ্টে, বহু ছলনার দ্বারা, ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতির মায়ার আড়ালে থাকিয়া এই সাম্রাজ্য করায়ত্ত হইয়াছে। ইহাকে কিছুতেই হাতছাড়া করা চলিবে না। প্রয়োজনে ভুতপ্রশাসক নিয়োগ করিয়া সর্বস্তরের অবাধ বিদ্রোহকে ঠেকাইবার বন্দোবস্ত করিতে হইবে। এই মূল বক্তব্যে সকলেই একমত, কিন্তু তাহা কি কি প্রকারে সম্ভব ইহা লইয়াই ম্যারাথন চুলোচুলি চলিতেছে।

কেহ সরাসরি প্রতিপক্ষকে শূলে চড়াইতে চাহেন, কেহ তাহাদের শূলে দিবার পূর্বে স্ব স্ব মস্তান কেলেভুত, জলাভুত, ভূমিভুত, বন্দরভুত, সীমান্তভুত, পরিবহণভুত, গেছোভুত, মেছোভুত দের আনন্দবিধানে, বেধড়ক ঠ্যাঙাইয়া দ করিবার পক্ষে চিৎকৃত। মোদ্দা বিষয় কিছুতেই নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী।

অবশেষে অনেক গাল ফুলাইয়া ববম বম বম আওয়াজ করিয়া,কাহাকেও ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিয়া,কাহাকেও ঈষৎ বকুনি দিয়া,কিঞ্চিৎ ভেউ ভেউ করিয়া ক্রন্দন করিয়া ভুতপ্রধান সামান্য সুস্থবোধ করিবার পরে, সর্বশেষ বিধান দিলেন- যদি পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসে, যদি কিঞ্চিৎ পরিমাণেও সন্দেহ থাকে যে, ভুতরাজ্য বিপন্ন হইতে পারে, তাহা হইলে চতুর্দিকে যে ভুতনৃত্য চলিতেছে, তাহা কয়েকশত গুন বিবর্ধন করিয়া সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়িয়া এক ভয়ংকর অচলাবস্থার সৃষ্টি করিতে হইবে, যাহাতে মনুষ্যকুলের কিছু অংশ ধ্বংস হয় আর বাকী ভীত হইয়া মঙ্গলগ্রহে পলায়ন করে। তাহা হইলেই ভুতরাজ্য অটুট থাকিয়া আপন মহিমা কীর্তন করিতে সক্ষম হইবে এবং বিভিন্ন প্রজাতির ভুতসকল বাকি জীবন সবিশেষ আরামেই নির্বাহ করিতে পারিবে।

চতুর্দিকে ভুতরাজের জয়ধ্বনি উঠিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র