দোলনচাঁপা ধর - মায়াজম

Breaking

১৮ মার্চ, ২০১৬

দোলনচাঁপা ধর

                                           উপহার












ঘরটা বেশ মনে ধরে গেছে গুণময়ের, শোয়ার আর বসার ঘর নিয়ে বেশ সুন্দর একটা কটেজ আদিগন্ত চাবাগানে ঘেরা। এত সুন্দর একটা লজের ভাবনা কেবল শিল্পীর মাথাতেই আসতে পারে। মনে মনে বিজনের রুচির প্রশংসা না করে পারে না। বিজনের এই লজটির কেয়ারটেকার শুভ্রাংশু জোয়ারদার নিজে এসে পৌঁছে দিয়ে গেলেন বাড়িটায়, এরকম চোদ্দটি কটেজ আছে, গুণময়ের বাড়িটার নম্বর তেরো। তেরো নম্বর নিয়ে যে গুণময়ের একেবারেই কোন কুসংস্কার নেই তা জেনে শুভ্রাংশু অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেন বলে মনে হল। ডানহিলের প্যাকেট খুলে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন
-
আমাদের এখানে খাবার বা চা স্ন্যাক্স ডাইনিং হলে গিয়েই নেওয়ার নিয়ম, আর অ্যালকোহলটা রুমে একেবারেই অ্যালাউড নয় তবে আপনার কথা আলাদা। আমি বরং একজনকে তেরো নম্বরের জন্য দিয়ে দেব, আপনার যা দরকার ওকে বলবেন। আশাকরি কোনরকম অসুবিধা হবে না।
মনে মনে একটু আত্মপ্রসাদ অনুভব করলেও বাইরে প্রকাশ না করেই গুণময় বললেন
-
আমার এই দামী কুঅভ্যাসের কথাটাও বিজন দেখছি আপনাকে বলেছে। আমাকে এতটা বিশেষ ভাববেন না প্লিজ।
শুভ্রাংশু আরও বিনত হয়ে বলে
-
কি যে বলেন, আপনি হলেন গিয়ে এখন বাংলার শিল্পের মুখ, তা স্যার গাড়ি লাগবে না লোকাল সাইড সিইং এর জন্য?
-
আসলে এসব অঞ্চল আমার আগে বহুবার ঘোরা, এবার কেবল ভিড় থেকে পালিয়ে আসা আর কি, তবে টোটোপাড়া টা একবার যাব, সে প্রায় ত্রিশ বত্রিশ বছর আগে এসেছিলাম একবার। মানুষ তখন সত্যিই কাঁচা মাংস পুড়িয়ে খেত সেখানে।
-
সে আর পাবেন না স্যার, টোটোপাড়াতে এখন বিউটিপার্লার হয়ে গেছে, শিকার ফিকার আর করবেই বা কোথায়? চাষ করে, এলাচ, আদা, আলু, কাঁকড়ি। এখানের লোকাল লোকেরা তো সস্তায় আদা আর এলাচ গিয়ে নিয়ে আসে ওদের থেকে। ভুটান থেকে ভারতে ঢোকার ওটা তো এখন প্রায় বাঁধা সড়ক। খাঁটি টোটোও আর নেই ওখানে, নেপালি, ভুটানি আর বিহারীদের সাথে মিশে ওরাও সভ্য(?) হয়ে পড়েছে। রাস্তায় আলো, বাজার, ব্যবসা মিলে ওটা এখন কেবল টুরিস্ট ডেসটিনেশন।
গুণময় গড়াই একজন প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী। কলকাতার সম্ভ্রান্ত মানুষদের ঘরে জি.জি স্বাক্ষরিত ছবি, গৃহকর্তার গলার স্বরকে দু পর্দা গম্ভীর করে দিতে যার জুড়ি নেই। তবে সম্প্রতি কোন অজানা কারণে তাঁর ছবির বাজার ভাল যাচ্ছে না। হতে পারে তাঁর ভাবনা তত আধুনিক নয় যতটা মানুষ চাইছে। তিনি নিজে অবশ্য চাহিদার যোগান দেওয়ায় বিশ্বাসী নন এমনটাই সবাইকে বলে থাকেন। এই তো এবার এখানে আসার আগেই একটি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে এই কথাই বলে এলেন। নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে এবং অবশ্যই শিল্পীমনের ক্ষুধা পূরণের জন্য মাঝে মাঝেই তিনি বেরিয়ে পড়েন এদিক সেদিক যথাসম্ভব জনপ্রিয় জায়গাগুলি এড়িয়ে। শেষবার বছর দুয়েক আগে গিয়েছিলেন সিটং এ, দার্জিলিং জেলার ছবির মত একটি পাহাড়ি গ্রাম কমলালেবুর বাগান ঘেরা। বেশ কিছু ল্যান্ডস্কেপ এঁকেছিলেন সেবার, সবুজ-কমলা রঙের উজ্জ্বল ছবিগুলির বেশ কিছু বেশ চড়া দামে বিকিয়েছিল। আসলে ছবির বাজার যে কেবল সমঝদারদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত এমন নয়, অনেকেই সামাজিক মর্যাদা বা কেবল দেখে ভাল লাগার ভিত্তিতেই ছবি কেনেন। যদিও সাধারণ দর্শক ছবির অর্থ তার নিজের মত করে বুঝে নেয়, শিক্ষিত দর্শক পাওয়া অসম্ভব না হলেও কঠিন। বিজন তো প্রায়ই বলতো শিক্ষিত দর্শক বেশী হলে অনেক শিল্পীকেই পেশা পরিবর্তন করতে হতে পারে।
পূজোর হই হই চিরকাল তাকে বাধ্য করেছে কলকাতা ছাড়তে, সেই ছাত্রাবস্থায় নেহাত পেটের দায়ে মেসের বাকি পড়া টাকা মেটানোর জন্য বারোয়ারী প্যান্ডেল সাজানোর কাজ করত সে আর বিজন। তখনো এভাবে থিম পূজোর রমরমা বাড়ে নি তাতেও বকেয়া ভাড়া মিটিয়ে কিছু থেকে যেত হাতে। তারপর আর পায় কে? বিজনের সাথে রাতের ট্রেনে জলপাইগুড়ি হয়ে সোজা জয়ন্তী। থাকার ব্যবস্থা ওদের বাড়ি, জয়ন্তী নদী আর ভুটান পাহাড়ের কোলে নিশ্চিন্ত কিছুদিন কাটিয়ে আবার ফেরা। রেল কোম্পানি তখন জঙ্গল কেটে নতুন লাইন বসাচ্ছে, এলাকায় তীব্র বিক্ষোভ সাধারণ জনজীবন ব্যহত হচ্ছে এইসব অরন্যনির্ভর জনগোষ্ঠীর। এলাকা থেকে চল্লিশ জন ছেলেকে বেছে নেওয়া হল এক এক পরিবার থেকে প্রশিক্ষনের জন্য। সরকার তাদের প্রশিক্ষিত গাইড হিসেবে গড়ে তুলতে চায় এই অঞ্চলটিকে উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্র করে তুলতে। বিজন পরিবারের বড় ছেলে তাই তার নামটিই লিখিয়ে এসেছিলেন ওর বাবা কিন্তু বেঁকে বসল বিজন, সে ছবিই আঁকবে, অগত্যা ওর সতের বছরের ভাইকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই তালিকায় ঢোকানো গেল। বিজনই এই লজের সন্ধান দিয়েছে অবশ্য ওর বাড়িতেই যেতে বলেছিল কিন্তু সম্পর্কের বেড়াজাল সবসময় ভাল লাগে না তা সে বন্ধুত্বের হলেও। মধু চা হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে সম্বিৎ ফেরে গুণময়ের -কি করে বুঝলি মনটা চা চা করছে?’ রহস্যের হাসি হেসে একছুট দেয় মেয়ে, গুণময় হেকে বলেন পালালে ছবি হবে কিভাবে?’
এখানে এসে পর্যন্ত এই মেয়েটিকেই তের নম্বর কটেজের জন্য দিয়েছেন শুভ্রাংশু, ভারী মিষ্টি মেয়ে নাম মধুবনি বয়স তের চোদ্দ হবে। জলের জগ, গ্লাস হাতে করে এসে দাঁড়াতেই মনটা উন্মনা হয় গুণময়ের, কার মুখের সাথে যেন খুব মিল।কিন্তু ভাব্বার সময় মেয়েটা দিলে তো? হেসে বলে-
-
ছবি আঁকেন বুঝি আপনি?
ততক্ষণে ছবি আঁকার সরঞ্জামগুলো বের করছিলেন তিনি। হেসে বলেন
-
হ্যাঁ, নাম কি তোমার?
-
মধুবনি
-
বাঃ চমৎকার নাম। নামের মানে জানো?
মেয়েটির মাথা দুদিকে নড়ায় তিনি বলেন এক রকম ছবির নাম
-
আমার একটা ছবি এঁকে দেবে?
মেয়েটির সরলতায় খুশিই হন গুণময়, তাকে এভাবে অনুরোধ করবার কথা কেউ ভাবতেই পারে না কলকাতায় বা চেনা পরিসরে। যেটুকু বাইরে যাবেন ভেবেছিলেন সেটুকুর ইচ্ছাও মরে গেছে বিউটিপার্লার এর কথা শুনে। ইচ্ছে হলে না হয় মধুবনিকেই আঁকবেন আর না হলে কেবল বিশ্রাম।
ত্রস্ত দৃষ্টি চারপাশে আর কানদুটো এতটাই সজাগ যে পাতা পড়ার শব্দও বুঝি চিনে নেবে। আলো কম বলে ছবিটাও হচ্ছে রহস্যময়, কিন্তু কেয়ার যৌবন তাতে ঢাকা পড়ছে না আদেও। একভাবে দাঁড়িয়ে ওর পা দুটোও ধরে আসছে বোধ হয়, এমন সময় দরজাটা হঠাৎ নড়ে উঠল...গুণো...বিজনের গলা। কেয়া ঝটিতি কাপড় জামা গুটিয়ে পেছনের দরজায় আর গুণময় হতভম্ব মুখে দরজা খুলতেই আলো এসে পড়ে...
-
কি গো ছবি আঁকবে না?
খোলা দরজা দিয়ে দুপুরের আলো মুখে পড়েছে, অসময়ে ঘুমিয়ে পড়া আর এমন দুঃস্বপ্নের জন্য ক্লান্তিকেই মনে মনে দায়ী করে মধুর দিকে তাকাতেই মনে হয় মধু অনেকটা কেয়ার মত দেখতে। সকালের সেই প্যাকেটটা থেকে একটা সিগারেট ধরান গুণময়, হেসে বলেন আজ বড় ক্লান্ত মধু, কাল আঁকব খাবারের থালাটা টেবিলে রেখে চলে যায় মধুবনি। সিগারেটের ধোঁয়ায় অতীত আজ অনেকদিন পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সোদপুরে কেয়াদের বাড়ির লাগোয়া কারখানায় সপ্তাহে পাঁচদিন সরার কাজ করতেন কেয়ার বাবা। ফাঁকা দুটো দিন ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন বিজন আর গুণময়কে, কেয়ার কথায়, কেয়া বিজনের বিশেষ বন্ধু।ওদের ক্ষমতা নেই স্টুডিও ভাড়া করে বা নিদেন পক্ষে একটা ঘর ভাড়া করে কাজ করার। আর কেই বা ওদের ঘর ভাড়া দেবে, ছবি আঁকবে শুনেই অনেকে ভুরু কুঁচকেছে, কেউ কেউ স্পষ্ট জানিয়েছে এটা ভদ্র পাড়া, ন্যাংটো মাগি নিয়ে বেলেল্লাপানা চলবে না। মডেল ভাড়া করার ক্ষমতাও যে ওদের নেই তা কিকরে বোঝায়। সেই সময়টায় গুণময় চেয়েছিল ছবি আর আঁকবে না বরং স্কাল্পচারে চেষ্টা চালাবে। রঙ তুলির চেয়ে কাদামাটি সহজলভ্য। যদিও তা আর হয় নি তবে গতিশীল বস্তুর দ্রুত রেখাচিত্র নিতে শিখে গিয়েছিল গুণময়। খুব কম সময়ে বিভিন্ন কোন থেকে লক্ষ্যবস্তুর নানারকম স্কেচ নিয়ে নিত সে। পরে অবসর মত মন দিয়ে ছবিটা আঁকত। এতে মডেলকে ঠায় বসে থাকার যন্ত্রণা সইতে হত না আর সেও ভাড়া না করেও যে কোন ব্যক্তি বা বস্তুর ছবি বানাতে পারত। একইরকম সমস্যায় পড়েছিলেন মহান শিল্পী অগুস্ত রঁদ্যা আর একইরকম পদ্ধতি নিয়েছিলেন তার ভাস্কর্য গড়ার জন্য। এক শিল্পীর জীবন উদ্বুদ্ধ করে আর এক শিল্পীর জীবনকে। তবে এসব অনেক পরের কথা একদিনে তো এ অভ্যাস হয় না।
পড়ে আসা দিনের আলোর সাথে সাথে আঁধার নেমে আসে সবুজ চায়ের বাগানে, হাঁটতে হাঁটতে বেশ খানিকটা চলে এসেছিল গুণময় এখন অন্ধকারে পথ চিনতে তাঁর বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল। জোনাকি ছাড়া আর কোন আলো নেই কোথাও, আর জোনাকিও লক্ষ লক্ষ যেন কালো ক্যানভাসে আলোর খেলা। অপূর্ব এই দৃশ্যও স্বস্তি দিচ্ছিল না ঠিকানার ভাবনায়, তখনই হাতে স্পর্শ লাগল কারো। এই অন্ধকারে তুই এখানে?’ ‘এখানেই আমার ঘর যে, পথ ভুলেছ তো? চল ছেড়ে আসি তোমায়। হাত ধরে মধু পৌঁছে দিয়ে যায় কটেজে। জোনাকির দৃশ্যটা কিন্তু মনটা ভাল করে দিয়েছে, দিনে যথেষ্ট ঘুম হয়েছে তাই জলরঙে রাতের ছবির নেশায় মেতে উঠলেন শিল্পী... ঠিক যেভাবে মেতে উঠেছিলেন কেয়ার সাথে। বিজনের প্রেমিকা কেয়া, গুণময়ের রং তুলির ছোঁয়ায় কবে যে রঙিন হয়ে উঠেছে তা জানতেই পারেনি দুজনে।
হাত পেতে টাকাগুলো নিতে সত্যিই ভীষণ কষ্ট হয়েছিল তবু এছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না। ছবিগুলোর আসল মূল্য বিশ্বাস, কিন্তু কেয়ার সে বিশ্বাস রাখতে গেলে শিল্পীর জীবন থেমে যেত আর বিজনের মত বন্ধু হারাতে হত চিরতরে। সে কথা কেয়াকে জানাতেই ও বড় স্থির হয়ে গেছিল, খুব বাস্তববাদী মেয়ে তাই সদ্য পাওয়া টাকা থেকে অর্ধেক যখন ওর হাতে গুঁজে দিল গুণময় ও না করেনি, শান্ত পায়ে ছেড়ে গেছিল ঘর। ছবিগুলোর ভাল দাম দিয়েছিল মিঃ মার্চেন্ট, আরও কিছু চেয়েছিল কিন্তু ওই তিনখানা ছবিই কেবলমাত্র আঁকা হয়েছিল। একই ঘরে থেকে বিজনকে লুকিয়ে তিনখানা ছবি আঁকতে যে কতটা সাহস আর সাবধানতা লাগে তা জানে কেবল কেয়া আর গুণময়। তবে স্কেচের অভ্যাস সে ততদিনে আয়ত্ত করতে পেরেছে আর কেয়ার শরীরের মাপ তার তুলি জানে তাই আরও কিছু লাস্যময়ী কেয়া মিঃ মার্চেন্টের হাতে যেতে পেরেছিল এর পরও।
খুবই বিরক্ত হচ্ছে গুণময়, যতবার মধুর মুখখানা আঁকছে ততবার কেয়ার মুখ হয়ে যাচ্ছে এই এতদিন পরও। এটা ঠিক যে এ কদিন এসব নিয়ে ভাবছে তবে এমন ভুল তার হয় না, আজ সারাদিন মধুর সাথে কেটেছে, আর বেশ কিছু স্কেচ নিয়েছে তার রাতে ছবিটা নিয়ে বসবে বলে। বড় নির্জন শান্ত এখানের পরিবেশ, রাতে কুকুরও ডাকে না, ডাকবে কি করে আশেপাশে কোন বসতিই তো নেই। তবুও মধুর মুখটা কেয়ার হয়ে যাচ্ছে কেবল, ‘ধুত্তোরবলে উঠে যেতে গিয়েও আবার বসে পড়ে গুণময়। মিঃ মার্চেন্টের সাথে যোগাযোগটা ঠিক সময়ে বন্ধ করেছিল সে, ওই সময়টা যেন একটা সিঁড়ির মত, তাকে বেশ খানিকটা উচুতে তুলে দিয়ে গেছে। টাকা ছিল ওই পথে অফুরন্ত কিন্তু শিল্পীর সম্মান ছিল না। সিঁড়িটাকে আর একবার ব্যবহার করলে মন্দ হয় না বিশেষ করে কেয়া যখন আবার স্বয়মাগতা। রাত তিনটের দিকে কাজ মোটামুটি গুছিয়ে আলো নেভায় গুণময়, ডিটেলিং কাল দেখা যাবে।
বিজনের ব্যবহারে পার্থক্য হয় নি কিছু কিন্তু কেয়া যে কোথায় হারিয়ে গেল... সে কথা বললেই বিজন গুম খেয়ে যেত। একসময় ফিরে গেল, গ্রামে গিয়ে কাজ করবে বলে। কেবল কেয়া যে কোথায় গেল ভাবতেই চোখ চলে যায় ছবির কেয়াতে যেখানে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে কেয়ার মুখ, এই অন্ধকারেও। ধক করে ওঠে বুক এ দৃষ্টি তো সে দেয় নি ছবিতে। বেড সুইচ অন করতেই সব স্বাভাবিক, অফ করলেই আবার...। ঘেমে ওঠে গুণময়, বিড়বিড় করতে থাকেন মাফ করো কেয়াকিন্তু সে দৃষ্টি প্রখর থেকে প্রখরতর হয়, হাতে ঝিঁঝিঁ, আলো জ্বালাও সম্ভব নয় আর। চোখদুটো যেন অন্ধকারে ভেসে এগিয়ে আসছে... আর চেতনা থাকে না।
যাবার আগে মধুর খোঁজ করছিলেন গুণময় আজ একবারও আসে নি সে, অন্য একজন চা জল দিয়ে গেছে। শুভ্রাংশু আকাশ থেকে পড়লেন মধু ? সে আবার কে?’ গুণময় আরও হতবাক আরে যে মেয়েটিকে এই পাঁচ ছ দিন আপনি পাঠালেন এই কটেজের কাজ দেখতে, এই তো পেছনে কোথায় থাকে শুভ্রাংশু স্পষ্টতই অপ্রস্তুত,’ এ কদিন শ্যাম আপনাকে খাবার জল চা সব দিয়ে এসেছে, আজও তো ওই আমাকে আপনার অসুস্থতার কথা জানালো। আর পেছনে কে থাকবে মাইলের পর মাইল চা বাগান কেউ থাকে না স্যার। কাল রাতের পর বয়স যেন অনেকটাই বেড়ে গেছে গুণময়ের, সব গুলিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ মনে হল কেয়ার ছবিটার কথা, সে কথা জানতে চাইতেই শুভ্রাংশু অবাক হয়ে জানতে চায় আরে হ্যাঁ কেয়াদিকে আঁকছিলেন দেখলামএবার অবাক হওয়ার পালা গুণময়ের কেয়াকে চেনেন আপনি?’ ‘ কি আশ্চর্য ! বিজনদার স্ত্রী কেয়া দি চিনব না? তবে মাথাটা প্রায়ই গোলমাল থাকত, একটা মেয়ে হয়ে মারা যাবার পর থেকে। এখানেই তো থাকতেন, যেটায় আপনি ছিলেন, তের নম্বর বলে অনেকে আপত্তি করত তাই ওটাতেই, এই পাঁচবছর হল মারা গেছেন
এই জোনাকির ছবিটা যদি আমাদের দেন, মানে আমরা উপযুক্ত দাম দিয়েই...আমতা আমতা করে শুভ্রাংশু। ব্যাগে ভরা ডান হাতটা বাঁ হাতে চেপে ম্লান হাসেন গুণময়, রাতে ওই ঘটনার জেরে ডান হাতটায় সাড় পাচ্ছে না, ছবি আর হয়ত আঁকা হবে না, বলেন ওটা বিজনকে আমার উপহার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র