সোনালী মিত্র - মায়াজম

Breaking

১৮ মার্চ, ২০১৬

সোনালী মিত্র

                        সম্পাদকীয় 












  ১৫ মার্চ ২০১৫ থেকে ১৫ মার্চ ২০১৬ । এক টুকরো আকর । স্থিতি । জীবাশ্মর সৃষ্টিসরূপ অবস্থান ! সময়কে স্থির নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচক দিয়ে ধরা যায় ? ১৫ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ , একবছর সময় ? একটুও বেশি কিংবা কম নয় ? একটু লাল কিংবা নীল , সবুজ কিংবা হলুদ নয় ! একবছর আসলে কি এক বছর ! এক বছরকে আমি যদি দু' শো বছরের সময়কাল ভাবি ? কিংবা 'এক বছর'  বলে কোনও সময় আছে বা ছিল না ভাবি ! হাসপাতালের নোংরা বেডে তুমি শুয়ে আছ ,একটা নক্ষত্র উজ্জ্বল আকাশ তোমার মুখের উপর পড়েছে আর তখনই শান্তিনিকেতন থেকে হাওড়া স্টেশনে নামলেন কবি , এইমাত্র গাড়িতে চড়ে তোমার হাসপাতালে এসে পৌঁছলেন  কবি , নেমে বললেন আমি খুব অসুস্থ , লিখতে পারছি না , এই নাও মুখে বলছি , লিখে ফেল তো খোকন । ---
'' তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী। ''
তুমি রোগজীর্ণ আঙুলে কলম তুলে নিলে , গড়গড় করে লিখে ফেললে লাইন । কত বছর আগে যেন ? কতবছর আগে যেন দেখেছি ? যা বাবা ! এই তো একটু সময় আগে , এখনও কবির গায়ের ছাতিম গন্ধে ভরে আছে কেবিন , এই তো কবি গাড়িতে উঠে ফিরে গেলেন ? কত বছর হল ? এক বছরের বেশি কি ? এক বছরের কম কি ?
মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ে , এদের ধর । পাখি গাছ নদী , এদের ধর । ফসল , বীজ , রস , এদের ধর । এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাদের জীবন , তাদের ধর । এদের কাছে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ মার্চের অবস্থান ধর । ৩৬৫ দিন ধর । এখন এদের ৩৬৫ দিনকে একজন শ্রমিকের ৩৬৫ দিনের সঙ্গে তুলনা টান , দু'জনার ৩৬৫= ৩৬৫ = ০ । শূন্য দেওয়াটাকে যদি যুক্তিসঙ্গত ভাবতে পার , তাহলে কবিতা মানে সময়ের শূন্য অবস্থান , কারণ তুমি যখন গাছের কথা লিখছ , তখন গাছের সময় শূন্য , যখন পিঁপড়ের কথা লিখছ , পিঁপড়ের সময় শূন্য , তোমার অনুভূতির অবস্থান তখন শূন্য , অর্থাৎ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া একটা দিনে তুমি কবিতা লিখেছে । বিনাশহীন এই অবস্থান তোমার সম্পদ , তোমার সময়ের ভগ্নাংশ , পৃথিবী থেকে চুরি করে নেওয়া সময় , যার কোনও বয়স নেই , যার কোনও সংখ্যা নেই ।

১৫- মার্চ থেকে ১৫ মার্চ বলে কিছু কি আছে ? আদৌ আছে ? ছিল কোনোদিন ? নাকি সময় নামক একটা দীর্ঘকবিতা আমরা পড়ি , শেষ করতে পারি না । নাকি সময় ঠাকুমার গল্প , দাওয়ায় বসে সন্ধ্যায় ঠাকুমা শুনিয়ে চলছেন  , চলছেন  , শেষ হয় না , শুরু হয় না , শুধু একটার পরে আর একটা গল্প-পাঠ করে চলেন ঠাকুমা । অথচ ঠাকুমার গল্পের শেষ হয় না , ঠাকুমার গল্পের পরাজয় হয় না , আর আমরা খেজুর পাটিতে শুয়ে কখনও রাজকুমার , কখনও রাক্ষসের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে চাঁদ বিদায় দিয়ে আর একটা চাঁদের অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়ি । এই ঘুমনো সময়ে আমাদের কোনও ইতিহাস নেই , খাওয়া নেই , দেখা নেই , চলন নেই , তাহলে কি এই ঘুমনো পর্বকেও সময় নাম দিয়ে তাকে মান্যতা দেব ? ঘুমিয়ে থাকা সময়টুকু কি তাহলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া কোনও একটা নির্জন দ্বীপ নয় ! অলিম্পিকের কোনও দৌড়বাজ , ফাইনাল ল্যাপে পৌঁছনোর জন্য দৌড়ে যাচ্ছেন , যাচ্ছেন , যাচ্ছেন , এই দৌড়ের মুহূর্তে তার স্থিতি , কাল , সময় বলে যদি কিছু যদি ধরতে চাও সেটা জয় বা পরাজয় , জয় বা পরাজয় কোনোভাবেই কি সময় হতে পারে ? দৌড়ের ওই মুহূর্তটুকু যদি জয় বা পরাজয়ের অবস্থান হয় তাহলে তার মধ্যে সময়ের অবস্থান কি করে থাকে ? সময়কে স্থূল চোখে দেখে যারা বিশ্বাস করতে চান , তারা অফিস ব্যাগ নিয়ে লোকাল ট্রেনের কামরা দেখতে পান , ফুচকা খেতে খেতে বিহারী বাবুর হাজা হাত দেখতে পান ,অথচ তিনিই যখন কিশোর কুমার শোনেন , যখন গোলাম আলি তার মস্তিষ্কে খেলা করে , সেই মুহূর্তগুলিকে সময়ের কোনও পাল্লাতে মাপবেন ? এ এক কঠিন প্রশ্ন !

১৫ থেকে ১৫ মার্চ পেরিয়ে এলো । মায়াজম পেরিয়ে এল । ঘড়িরকাঁটা ও ঘুরতে ঘুরতে ১২ টার ঘরে বারবার আসে , সূর্য ও ঘুরতে ঘুরতে নিজের অবস্থানে বারবার আসে । কোনোএক অবস্থানে যদি বারবার কেউ বা কোন বস্তু আসে , তাহলে তিনি কি আদৌ কোনও যাত্রা করল বা শেষ করল ? ধরুন , আমি বাজারে গেলাম , আবার ফিরে এলাম , নিয়ম করে , আমি কি কোথাও গেলাম ? কোথাও গেলে কি আর ফিরে আসা যায় ? কিংবা যে অবস্থানে গিয়েছিলাম , ঠিক ঠিক একইভাবে কি ফিরে আসা বা যাওয়া যায়  পুনরায়  ? যায়  না মনে হয় ? গভীর অংক । যাওয়া বা ফিরে আসা কোনটাই বিশুদ্ধ নয় , কোনটাই সর্বজনীন নয় । সময় একটা বা একাধিক সংখ্যা মাত্র , সর্বজন গৃহীত কোনও মতামত  নয় । সময় মর্যাদাহীন একটা অবস্থান । যেমন নারকেল ঝুনো হলে খোলের মধ্যে জলশূন্য আধারের সৃষ্টি করে , যেন একসময় ছিল , এখন নেই । সময়কে যারা বছর দিয়ে ধরেন , তারা চাকরি করেন , তারা ব্যবসা করেন । এদের বাইরে যত অগণিত প্রাণীবর্গ রয়েছেন তাদের কাছে সময় শূন্য । ধানের বীজ ধান হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে জলের কাছে , বাতাসের কাছে , মাটির কাছে , এখানে কোনও সময় নেই ।  নদীর জল অপেক্ষা করে বাষ্পীভূত আর মেঘের অবস্থান আর হাওয়ার কাছে , এখানে সময় নেই । পিঁপড়ে অপেক্ষা করে গর্ত আর খাবারের টুকরোর প্রতি , এখানে সময় নেই ।
এত নেই নেই সময়ের মধ্যে তুমি কে হে হরিদাস পাল ? যে সময় নিয়ে যুদ্ধ কর । মায়াজম কোনও সময় কে পেরুইনি , একটা অবস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে , তাই ১৫ মার্চ যেমন কোনও শেষ নয় , তেমন ১৫ মার্চ ২০১৬ কোথাও এসে পৌঁছয়ও নি ।

সময় নিয়ে কথা থাক এবার । যারা - যারা এবারের সংখ্যায় লেখা দিয়ে সাহায্য করলেন আসলে আমাদের নয় , নিজেকেই সাহায্য করলেন  , তাদের ধন্যবাদ । যারা মায়াজম এর নিয়মিত পাঠক বা পাঠক হবেন , তাদের ধন্যবাদ । যারা পর্দার পেছনে থেকে সাহায্য করলেন , তাদের ধন্যবাদ । সকলে খুব ভাল থাকুন , সকলে শিল্পের মত থাকুন । ধন্যবাদ ।


                                                                                      শুভেচ্ছা সহ সোনালী মিত্র 
                                                             সম্পাদক - মায়াজম 

১৮ই মার্চ ২০১৬ , নিউ দিল্লী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র