জয়তি অধিকারী - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

জয়তি অধিকারী



টেলর-মেড






মিকি মাউসের পাশেই উঁকি মারছে রক্তচক্ষু রাক্ষসের লম্বা লম্বা দাঁতের বাহার। স্পাইডারম্যান একপাশের দড়িতে ঝুলে ঝুলে নিজের প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে ছুঁয়ে আসছে ছোটা ভীমের তিলক টানা কপাল। ঢোলক পুরের রাজকুমারী গোল গোল চোখে নজর রাখছে স্পাইডারম্যানের উপর। কি মতলব কে জানে ব্যাটার! ব্যাটম্যান আর ক্রিস-এর মধ্যে বড্ড রেষারেষি। কে কাকে টপকে যাবে সারাক্ষণ শুধু সেই প্রচেষ্টা। সবকিছুর মাঝে নির্লিপ্তমুখে বসে থাকে এদের সকলের লোক্যাল গার্জেন। কাকে কখন কি দামে কার হাতে তুলে দেবে ওই মুখোশগুলোর কেউ জানে না। কিন্তু ওরা এটাও জানে না যে, সেটা এই মুখোশ-বিক্রেতাও জানে না। সকালের দিকে যে মুখোশের দাম চড়া থাকে, সূর্য ঢলার সাথে সাথে দামও পড়তে থাকে। দিনশেষে অন্তত দুমুঠো অন্নের সংস্থান করার ব্যর্থ প্রয়াসে। গ্যাস্ট্রিক আলসারের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে যেতেও ক্রেতার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে উঠতেই হয়, “নিয়ে যান দাদা, এই দামে কেউ দেবে না আপনাকে। দেখবেন বাড়িতে দেরী করে ঢুকলেও বাচ্চার মুখে হাসি দেখতে পাবেন”। মুহুর্মুহু এই মুখোশটা খোলা-পরা করতে করতে হয়ত বিক্রেতা নিজেও ভুলে গেছে যে সারাদিন মুখোশ বিক্রি করতে করতে সে নিজেই আসলে পাক্কা মুখোশধারী হয়ে উঠেছে। কোন পাওনাদারকে দূর থেকে আসতে দেখলেই তড়িঘড়ি মুখের উপর চাপিয়ে নেয় হাতের কাছে যখন যা পায়... বাঘ হোক বা জোকার। মুখোশ বিক্রি করতে করতে সে এটাও বেশ শিখে গেছে কি করে মুখোশ চিনে নিতে হয়। এখন যেকোনো মানুষকে দেখলেই সে বলে দিতে পারে সেই মানুষটা কিসের মুখোশ পরে আছে।
শুধু তার ঘরে পাকাপোক্তভাবে আসতে চেয়ে যে মানুষটা তার ভাইয়ের হাত ধরে পাশের খুপরি ঘরে সংসার পেতে বসেছিল, সে যখন তার সামনে মুখোশ পরে আসত, একেবারেই বুঝতে পারেনি সে। তার পর থেকেই মুখোশ চিনতে শিখে গিয়েছিল এই মুখোশ-বিক্রেতা। জীবন বোধহয় প্রতি মূহুর্তেই কিছু না কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। মূল্য যাই নিক না কেন। শুধু পার্থক্য এই যে, এই মুখোশগুলো কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না। এগুলো টেলরমেড…যার যার নিজের মত করে তৈরী করে নেওয়া...এই মুখোশগুলো অমূল্য।

1 টি মন্তব্য:

  1. valoi laglo. choto ekta golper moto. jodio ekta line ektu obastab laglo. du minute er j sab khodder mukhosh kinte ase tader mukhosh chena kivabe samvab hoy ek dokanir? ei tuku bade baki ta mondo lageni.

    উত্তরমুছুন

Featured post

সোনালী মিত্র