রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়

মুখোশ
(একটা ছোটো ছবির প্রস্তাবনা)








যা দেখা যাচ্ছে, ঘষা কাচের মধ্যে দিয়ে। ফলে, দৃশ্যের বাইরে বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু মনে হচ্ছে গত, বিগত দিনের ধারাপাত জমে রয়েছে।  একটা শাদা-কালো মঞ্চের ভগ্নাংশ। তিনটে পুরনো সোফা। টুকরো টুকরো পুরনো কার্পেট। একটা ইতর গন্ধ ভাসছে। মঞ্চে প্রায়ান্ধকার।
১ম জনের তড়িঘড়ি প্রবেশ। সে চারদিক ঠাওরে নিজেকে একা আবিষ্কার করে এবং করে প্রথমেই সোফার খাঁজে, তারপর নিচে নাক ডুবিয়ে দিয়ে কিছু খোঁজে, অন্তত খোঁজার চেষ্টা করে বলে মনে হয়।
২য় জনের প্রবেশ। সে ঘষা কাচের মধ্যে দিয়ে ঢুকেই ১ম জনকে খুঁজতে থাকে। সেরকমটাই ঠেকে। তবে তার দৃষ্টি উল্লম্ব হওয়ার ফলে সে আনুভূমিক কোনো কিছুরই সন্ধান পায় না। সিলিংয়ে আটকে থাকা একটা চুপসে যাওয়া বেলুনে তার চোখ আটকে যায়।
আবহ শাদা-কালো হওয়ায় বেলুনের রং সম্পর্কে আগাম কোন আভাস পাওয়া যায় না। যতক্ষণ না, আলম্ব তার দৃষ্টি মেঝেতে নেমে আসে এবং সে ১ম ব্যক্তিকে আবিষ্কার করে এই নির্বাক ছবিতে যেটুকু ঠোঁট নাড়ে, তাতে 'ইউরেকা' ঠাহর হয়। তারা পরস্পরকে সন্দেহে আলিঙ্গন করলে দেখা যায় মঞ্চ পরিচালক ১ম ব্যক্তির মাথার পেছনে কালো কাপড় মুড়িয়ে তার ওপর শাদা দিয়ে চোখ, নাক মুখ এঁকেছে। দুটো চোখই ভরাট শাদা।

এসময় ২য় ব্যক্তিকে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তার কানদুটো শাদা ক্লিনিক্যাল টেইপ দিয়ে মোড়া।
১ম ব্যক্তি উচ্চৈঃস্বরে কিছু বললে সেটা সোজা সিলিংয়ে উঠে যায়। এবং আটকে গিয়ে মরা বেলুনটার পাশে ঝুলতে থাকে। যেন তার পতনের সমস্ত অসম্ভাব্যতাই ৩য় ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করে। তার ঠোঁটজোড়া থেকে সেলাই হওয়া সুতো তখনও ঝুলছে। সে ঢুকেই পশ্চিমের সোফাটাকে লাথ মেরে ফেলে গড়িয়ে দেয় ও গড়ানো সোফার ওপরে নিজের শরীরটাকে ছুঁড়ে ফেলে এবং সেটা নিপুণ ভাবে করে।
এসময় দেখা ও জানা যায় সোফাগুলোর মাঝখান দিয়ে সাঁকো বাঁধা ছিল। এবং, একটা শাদা কাগজের নৌকাডুবির পর বিকার, অবিকার ও নির্বিকার যথাক্রমে তাদের দৃষ্টি, শ্রাব্য ও বাক শক্তি হারিয়ে কিছুক্ষণ আগেও পরস্পরকে খুঁজছিল।
কিন্তু মঞ্চ পরিচালকের ইচ্ছানুসারে যেহেতু এটা শেষ পর্যন্ত বিয়োগান্ত হয়ে ওঠে না সেহেতু এর নামকরণ যথার্থ ও বিষয়াশ্রিত--এমনটাই দাবী করা হয়।

৮টি মন্তব্য:

  1. কথাটা পুরোনো, বলার ঢং-টাও তাই। শুধু সাজগোজটাই বিশেষ, হয়তো বা মৌলিকও।

    উত্তরমুছুন
  2. অরুণ চক্রবর্তীরবিবার, জুন ০৭, ২০১৫

    সিরিয়াসলি। যদি ছবি করতাম আমি তোমার এই স্ক্রিপ্টের, আ্যনিমেশনে তোমার প্রতিটি শব্দ ফুটিয়ে তুলতাম। অন্যভাবে সম্ভবই না।

    উত্তরমুছুন
  3. Tomar lekha borabor e odvut lage..at a aro odvut...tomar pokkey e lekhe sombhob..odvut sundor.

    উত্তরমুছুন
  4. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  5. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  6. প্রথমবার পড়লাম... দ্বিতীয়বার পড়লাম ... তৃতীয়বারে বুঝলাম আসলে আর পড়ছিনা। বরং লেখাটাই আমাকে পেড়ে ফেলেছে। গেঁথে গেছে একটা ছবি মস্তিস্কে। ছাপ রয়ে যাবে...

    উত্তরমুছুন

Featured post

সোনালী মিত্র