মুখোশবিদ
ভীষণ ক্লান্ত আমি। রাত শেষ হয়ে এল। কিন্তু আমার শোয়ার উপায় নেই। আরেকটু পড়েই আকাশে উঠতে হবে আমাকে। খুব কম সময় মাটিতে থাকি আজকাল। নামার আগে মুখোশ এঁটে নিতে হয়। পেশার কারণে। আমি পেশাদার মুখোশবিদ। নানা ধরনের মুখোশের ওপর প্রশিক্ষণ দিতে হয় আমাকে ।মনের ভাব গোপন করবার ওই একটাই তো রাস্তা।
নানা ধরনের মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন। বেশির ভাগ মানুষ আসেন, অফিসের বস-এর সামনে , প্রেমিকার কাছে [প্রাক বিবাহ , বিবাহ বহির্ভূত ] আর নিজের সামাজিক অবস্থান ঠিক রাখার জন্য কি কি ধরনের মুখোশ ব্যবহার করবেন , তার ওপর জানতে ।আমি তাদের বলি বেশির ভাগ সময় একটা চাপা হাসি ঝুলিয়ে রাখার মুখোশ পড়ে থাকতে। তাতেই ৬০ % কাজ চলে যাবে।তবে ঝুলিতে চাপা গাম্ভীর্যের একটা মুখোশ রাখলে আরও ভাল ফল পাবেন।
সবচেয়ে কঠিন মুখোশ হল, ভেতর ভেতর অসম্ভব কৌতূহল/ রাগ/ কাম/ বিরক্তি/ ঘৃণা আসছে অথচ , সেই সময় নির্লিপ্তির মুখোশ লাগান। এইটা দীর্ঘ অভ্যাস ও অনুশীলনের ফলেই আসা সম্ভব।আমার খুব কম সংখ্যক কাস্টমার এটা ঠিক ভাবে আয়ত্ত করতে পারেন।আরেক ধরনের মুখোশের ডিমান্ড দিন দিন বাড়ছে ।সেটা হল, আপনি কারো ক্ষতি করতে চান, কিন্তু সে যেন ভাবে, আপনি তার উপকার করতে এসেছেন।
ক্ষতির পরিমাণ যত বেশি আর মারাত্মক , মুখোশ তত আঁটসাঁট হবে। ততটাই উপকারী ভাব আনা চাই।পকেটে পয়সা আছে, অথচ যেন ভীষণ টানাটানি, এই মুখোশের চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী। আবার উলটো টার ডিমান্ডও কম না। [হা: হা: , কোন দিকে যে যাই।]তবে, আশার কথা , খারাপ মানুষ যে ভাবে ভাল মানুষ সাজার মুখোশ চায়, ভাল মানুষ সেই ভাবে খারাপ সাজার মুখোশ চায় না। ব্যতিক্রম আছে, তবে খুব কম।
মাঝে মাঝে আমি স্ত্রীর কাছে যাবার সুযোগ পাই। ছেলে মেয়েরা অনেক দূরে চলে গেছে, যে যার পছন্দ অনুযায়ী মুখোশ নিয়ে। ওদের আমার মত ভেরিয়েসন নেই।কিন্তু আমার স্ত্রী ? কোন সময় ওর মুখে মুখোশ থাকে না। একদম আয়নার মত ওর মুখ। ভেতরটা স্বচ্ছ সরোবরের মত। ও কিন্তু বুঝতে পারে আমার মুখে কখন কি মুখোশ লাগান।
আজ শোবার আগে জিগ্যেস করেছিল---
- আমার কাছে আসার আগেও কি তুমি মুখোশ খুলে আসতে পার না ?
ওর ক্লান্ত , ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বিছানা ছাড়ার আগে একবার চেষ্টা করলাম। যাবার আগে একবার অন্তত মুখোশ সরিয়ে একটু চুমু খাব।
না: , পারলাম না। চামড়া আর মুখোশ আলাদা করতেই পারলামনা কিছুতেই।
আমি যে পেশাদার !!!
motamuti laglo. mon chunlo na. notun kichu vabna pelam na.
উত্তরমুছুন