অনন্যা ভাদুরী - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

অনন্যা ভাদুরী



মুখোশের মানুষ






কুয়াশার  সাদা চাদর মুড়ে শহরের শীত ঘুমাচ্ছে। কনকনে একটা তীব্র ঠাণ্ডা অস্থি মজ্জায় ঢুকে নড়াচড়া করার ক্ষমতাকে যেন গ্রাস করেছে এই শীত। গভীর এই শীতের রাতে বোধহয় ক্ষুধার্তরা বা চোর উচক্কারা জেগে থাকে। আর জেগে থাকে অন্তরজ্বালার পোড়ানি মন। এত ঠাণ্ডা তবু মানুষের যন্ত্রণাগুলো সহজে ঠাণ্ডা হতে চায় না।হৃদপিণ্ড মুচড়ে জানান দেয়, “ আমিও তোমার খুব কাছের।”
এমন শীতের রাত পূবালীর জীবনে আগে কখনও আসে নি। অন্য সময় হলে সুশান্ত ওকে সারাদিনের অফিসের গল্প শোনাতে বসলে কানে বালিশ দিয়ে পূবালী বলত, “ প্লিজ সুশ, আমাকে এখন ঘুমাতে দাও ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে। আর যদি তোমার ওই বেরসিক বসের গল্প শুরু কর,তাহলে তোমার ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে তোমাকে জাপটে ধরে ঘুমাব”। সুশান্ত তার স্ত্রী পূবালী ওরফে রিনির স্বভাব খুব ভালো করেই জানত।ভীষণ মানিয়ে নেওয়া মানসিকতার মেয়ে কিন্তু একবার জেদ ধরলে সুশান্ত ওর কাছে একেবারে কুপোকাত। সুশান্ত খুব ধীরে ধীরে বলত,‘‘ ঠিক আছে ঘুমাও রিনি। আমার কি সেই সুখ আছে, বস ব্যাটা এই শীতে বউয়ের সাথে রোমান্স করবে আর আমার কপালে অফিস থেকে ফিরেও হাজারটা কাজ।পূবালী স্নেহের কণ্ঠে হেসে বলত, জলদি কাজ শেষ কর সোনা ,আর শোন আমাকে ডাকবে কিন্তু, নইলে তোমার বসের নামে আমি কেস করে দেব। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকে সুশান্ত বলত , “রিনি তোমার এই স্নিগ্ধ হাসি আমার জীবনের প্রাণশক্তি।’’

কারো চাপা গলার আওয়াজে পূবালীর ভাবনায় বিচ্ছেদ পরে। এতো সায়নের গলা, কার সাথে এত রাতে আস্তে আস্তে কথা বলছে? নিশ্চয়ই দীপান্বিতার সাথে। বেশ আছে ওরা, দুজন দুজনকে ভালবাসে অথচ বিয়ের কথা বললেই দুজনের কেরিয়ারের কথা ভেবে অস্থির। কেন , বিয়ে করলে বুঝি পদন্নোতি হয় না? পূবালী কত বুঝিয়েছে সায়ন ওরফে বনিকে। বনির সেই এক কথা “ বৌদি বিয়ে করে কি স্বর্গ পেয়েছ? আমরা এই বেশ ভাল আছি। যেদিন বিয়ের প্রয়োজন বোধ করব, তোমাকে এসেই আগে বলব।” কিন্তু কি এমন কথা যে এত রাতে চাপা গলায় আলোচনা হচ্ছে? কোন বিপদ হয় নি তো দীপার? এগিয়ে যায় পূবালী বনির ঘরের দিকে। ঘরে ঢুকতে গিয়ে পূবালী শোনে বনি ফোন দীপাকে বলছে “ আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি দীপা, এতদিনেও চিনতে পারি নি। এখন তো নিজের কাছে নিজের মুখ দেখাতে লজ্জা হচ্ছে। এর নাম যদি ভালোবাসা, বিশ্বাস হয় তাহলে তার থেকে শত হাত দূরে থাকা ভালো।” পূবালী বুঝল ঠিক আবার ঝগড়া করেছে দুজনে। মনে মনে ভাবে , উফ কবে যে এরা বড় হবে? আমার আর সুশের মান অভিমান হত, কিন্তু তাই বলে এমন করে ঝগড়া করে নি কখনও। এত ভালোবাসা ছিল বলেই হয়ত ভগবান সহ্য করতে পারে নি। যাক ওদের ঝগড়া ওরাই মিটিয়ে নিক।এই ভাবতে ভাবতে পূবালী এগিয়ে যায় ব্যালকনির দিকে।

জীবনের সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। শোক-দুঃখ, হাসি – কান্না, আনন্দ- বিষাদ, পাওয়া -হারানো সব সময় মাফিকই আসে। এমন কি সান্ত্বনাও একদিন অভ্যাস হারিয়ে ফেলে। এই তো মাস সাত আগেও কত রঙ্গিন ছিল পূবালীর জীবন। আজ নিতান্ত সাদা কালো নিয়ে বেঁচে থাকা। যদিও জ্ঞান বোধহীন শাশুড়ির সেবা, শ্বশুরের ভালবাসা ও মিষ্টি শাসন, দেওরের আবদারে একরকম ঠিকঠাক কেটে যাচ্ছে সময়। তবুও যেন এক শূন্যতা, বিশেষ করে রাতে। অবশ্য বনি রাতে অনেকটা সময় দেয়। পূবালী বুঝতে পারে বনি মজার মজার গল্প করে তাকে একটু আনন্দ দিতে চায়। পূবালীও ওর সাথে হেসে কুটিপাটি হয় কিন্তু অন্তর কেঁদে শুধু এক কথাই বলে,“ ফিরে এস সুশ।” সাত মাসে আগে একটা মিটিং এ যাবার সময় পথ দুর্ঘটনায় সুশান্ত পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। মাত্র আড়াই বছর ওদের বিয়ে হয়েছিল। পূবালীকে চোখে হারাত সুশ। তাহলে কি করে পূবালীকে ছেড়ে চলে গেল সুশ, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে খুঁজে পূবালী আজ ক্লান্ত হয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছে।গত দুমাস ধরে অনাদি বাবু মানে পূবালীর শ্বশুর ও বনি ইশারায় পূবালীকে বোঝাতে চাইছে জীবনে নতুন করে বাঁচার কথা। পূবালী না বোঝার ভান করে থাকে। বুঝে কি হবে? সুশান্তকে ভুলে অন্য কাউকে তার জীবনে ভাবতেই পারে না। সময় কি অনুভব করাবে তা সময়ই জানে। কিন্তু এখন পূবালী শুধু সুশের স্মৃতি নিয়ে থাকতে চায়। এক একদিন সুশ রাতে পূবালীর কাছে এসে বসে, অনেক কথা হয় দুজনের । তারপর পূবালীকে ঘুম পাড়িয়ে চুপ করে চলে যায় দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিটার ভিতরে। পূবালী আফসোস করে, সুশের কথা না মেনে যদি জেদ করেই একটা বাচ্চা নিয়ে নিত তাহলেও সুসের একটা জীবন্ত স্মৃতি থাকত পূবালীর কাছে।
এসব ভাবতে যখন মগ্ন পূবালী , তখন বুঝতেই পারি নি কখন যেন বনি ব্যালকনির পাশে এসে চুপ করে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। নজরে পরতেই পূবালী বলল, “ ওমা , তুই কখন এখানে এসেছিস, আমি তো তোর ঝগড়া শুনে এখানে এসে দাঁড়ালাম। বনি শুনে ব্যস্ত হয়ে উঠল, কি শুনেছ বৌদি? পূবালী হেসে বলে, “ ভয় নেই ভাই, কোন গোপন কথা শুনি নি, শুধু ছাড়া ছাড়া কিছু অভিযোগ শুনেছি। বনির মুখে নিশ্চিন্ত হবার ছবি ফুটতে দেখে পূবালী হেসে বলে, তোর বৌদি তোর সাথে আছে। যখন দরকার নির্দ্বিধায় বলবি, বুঝলি? বনি আবেগে পূবালীর হাতটা ধরে বলে “তোমার মত সবাই হয় না কেন?” পূবালী হেসে বলে বিয়ে কর আগে দীপাকে, আমার মতই হয়ে যাবে। আমার আর তোর দাদার ভালোবাসা দেখেছিস তো? তোকেও রামের ভাই লক্ষণ হতে হবে। মান অভিমান থাকবে, তাই বলে কখনও দূরে যাস না তোর দাদার মত।” বনির চোখে জল দেখা পূবালী নিজের কষ্ট চেপে রেখে বলে,‘‘চল এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পর। সকালে তোর অফিস আছে।”



গত মাসে পূবালীর বাবা মাকে জরুরি কারণে ডেকেছিল ওর অনাদি বাবু । ওনারা এসে কিছুদিন ছিল এই বাড়িতে। পূবালীরও বেশ ভালো লাগছিল । কিন্তু কারণটা যখন তার দ্বিতীয়বার বিয়ের প্রসঙ্গে তখন মনে মনে খুব রাগ হয়েছিল। অভিমান হচ্ছিলো বাপির ওপর। ছেলে নেই বলে কি বউমা আজ বোঝা? পূবালী তো কিছু চায় নি , শুধু সুশের স্মৃতি ছাড়া। বাবা মা চলে যাবার পর অনাদি বাবু একদিন সন্ধ্যায় পূবালীর ঘরে এসে বসে। ওর মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলে, ‘‘ আমাকে ভুল বুঝিস না মা। তোর শাশুড়ি আজ আছে কাল নেই, আমারও বয়স বাড়ছে। বনি ওর জীবন গুছিয়ে নিলে তুই কি নিয়ে থাকবি মা? স্মৃতি গুলোও একদিন ফাঁকি দিয়ে আবছা হয়ে যাবে। সামনে এগিয়ে যাবার নামই জীবন।” কোথাগুলো মন দিয়ে শোনে পূবালী। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা এত তাড়াতাড়ি নেবারই বা কি আছে বোঝে না সে। শুধু শ্বশুরকে চিন্তামুক্ত করতে বলে ‘‘আমি ভেবে দেখব বাপি।’’ মানুষের ভাবনাগুলো কখন যে মূল স্রোত হারিয়ে এলোমেলো করে দেয়, তা বোধহয় সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ জানে না। দশ বার দিন আগে পূবালীর এক ছেলেবেলার বান্ধবীর তানিয়া ও কলেজের বন্ধু রাজীব এর বিয়েতে গিয়েছিল। পূবালীর একদম ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু তানিয়ে দিব্যি দিয়ে বলেছিল, তুই না গেলে আমি বিয়ের পিড়িতে চোখের জল নিয়ে বসব। সুশান্ত চলে যাবার পর ওর সব বন্ধু- বান্ধবীরা পাশে থেকে মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা করেছে, সেটা কি ভোলা যায়? তাছাড়া বাপি ও বনির ইচ্ছাও তাই, পূবালী দুদিন বন্ধুদের সাথে আনন্দ করে আসুক। বেশ ভালই লাগছিল তবে সবার একটা আলাদা যত্ন ওর ওপর দেখে শুধু কাঁটার মত বিঁধে জানান দিচ্ছিল পূবালী আজ বড় একা। অনিমেষ ও এসেছিল বিয়েতে। পূবালীকে সে পছন্দ করে স্কুলের দিন থেকে। অনিমেষ এমনিতে খুব ভালো ছেলে তবে ভীষণ মুখকাটা। যা মুখে আসে, তাই বলে। এটা আবার পূবালীর পছন্দ না, যে মানুষের আবেগ নেই যে অন্যকে কষ্ট দিতে দু বার চিন্তা করে না, সে কি পূবালীর মত নরম মনের মানুষকে ভালো রাখতে পারে? তাই কখনও অনিমেষকে পূবালী ভালবাসতে পারে নি। বৌভাতের রাতে অনিমেষ পূবালীকে আরেকবার প্রস্তাব দেয়। তবে সেটা বিয়ের প্রস্তাব। পূবালী এবার খুব রেগে যায় এবং তার মুখ থেকে গত কয়েক মাসের যন্ত্রণাগুলো কথা হয়ে বর্ষিত হয় অনিমেষের ওপর। এক কথা দু কথায় যখন তুঙ্গে বিতর্ক, তখন অনিমেষের মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে বাস্তবের এক চরম সত্যি। চিৎকার করে অনিমেষ বলে ওঠে, এই যে এতক্ষণ ধরে স্মৃতি স্মৃতি করে প্রলাপ বকছিস, কার স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে চাইছিস? যে কিনা অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে ফুর্তি করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আজ বেঁচে থাকলে ভালো মানুষের মুখোস পরে ভালবাসার অভিনয় করত, তার থেকে কি আমার মত মানুষ ভালো না? আমি যা করি মুখের ওপর কিন্তু কাউকে ঠকাই না পূবালী।
এক মুহূর্তে সঞ্চিত অনুভব গুলো কেমন যেন অবশ হয়ে গিয়েছিল পূবালীর। অনিমেষ আরও বলল, “ আমি মিথ্যা বলছি না তা তুই নিশ্চয়ই বুঝেছিস। দুর্ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম কিন্তু প্রথমে বুঝতে পারি নি ওটা সুশান্ত দা। সায়নকে দেখে সব পরিষ্কার হয়। তোর শ্বশুর ও সায়ন আমাকে অনুরোধ করেছিল আমি যেন কথাটা কাউকে না জানাই। এতদিন কেউ জানে নি রে, শুধু আজ তোর মিথ্যে স্মৃতির অহংকার ভাঙ্গাতে তোকে জানাতে বাধ্য হলাম। তবে বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে কিছু বলিস না। কারণ তুই জানতে পেরেছিস জানলে, আমি তো ছোট হবে বটেই। তবে তার থেকে তোর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও ছোট হয়ে যাবে তোর কাছে। ওদের তো কোন দোষ নেই পূবালী। আমাকে বিয়ে করতে তোকে বলছি না, তবে এভাবে কিছু মিথ্যে নিয়ে আর বেঁচে থাকিস না। ভালো থাক আর ভালো থাকতে দে তোর আশে পাশের মানুষ জনকে। পূবালী অনিমেষ কে বলল , আমাকে সাহায্য করবি? সেই মেয়েটার কাছে নিয়ে যাবি? অনিমেষ বলল, কি করতে যাবি ওর কাছে? কাটে ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে? পূবালী বলল,না শুধু দেখতে চাই কি এমন বেশি পেয়েছিল ওখানে যে আমাকে নিয়ে এভাবে পুতুল খেলা খেলল?” অনিমেষ বলল “আমি ওই মহিলাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম এবং বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম। আমার নজরে বাইরের থেকে তেমন কিছু বিশেষত্ব চোখে পরে নি। তাই তুইও কিছু খুঁজে পাবি বলে মনে হয় না। তবে সত্যি যদি বিচার করতে চাস রঙ্গিন মায়ার চশমা খুলে দেখ। সত্যিটা ঠিক খুঁজে পাবি।”
একটা একটা করে সব পর্দা সরে যাচ্ছে পূবালীর জীবন থেকে। কেন ওকে দুর্ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় নি বনি, বাপির এত বিয়ের জন্যে তাড়াহুড়া, বনি আর দীপার ফোনের কথা, কথায় কথায় বনির চোখে জল, “ তুমি কেন এত ভালো বৌদি” সব সব আজ পরিষ্কার। তবু পূবালীর পরিষ্কার ভাবে সব বুঝতে চাইছিল ।

ভোরের ট্রেন ধরে পূবালী ফিরে আসে। প্রথমে সে যায় থানায় সুশান্তের কেসের তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের কাছে। সব ঘটনা মন দিয়ে শোনে। তাও যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বাড়ি ফিরবে ভেবেও বাড়ি না গিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গেল। আট আগে যে দুর্ঘটনায় পূবালী বিশ্বাসটুকু ছাড়া সব হারিয়েছিল, তার কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই কোথাও। কিন্তু যে বিশ্বাসটা হারাল এখন তা যেন বার বার নির্লজ্জ ভাবে প্রমাণ চাইছে। মনকে শক্ত করে এগিয়ে গেল রাস্তার পাশে দোকান গুলোতে। সবাইকে জিজ্ঞাসা করে একটাই উত্তর পেল, “তুমি হেরে গেলে পূবালী, তোমার নিজের বলতে কোনদিনই কিছু ছিল না।” সারাদিন কোথায় কোথায় যে ঘুরল তা পূবালীর নিজেরও জানা নেই
দেরি করে বাড়ি ফিরতে দেখে বাড়ির সবাই ভীষণ চিন্তিত হয়ে ছিল। বনি অফিস থেকে ফিরে বাইক নিয়ে পূবালীকে খুঁজতে বেরিয়েছে। পূবালীকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে পাগলের মত ছুটে আসে ওর কাছে অনাদি বাবু। তারপর বেশ রেগে গিয়ে বলে, “তোর কি কোন কাণ্ড জ্ঞান নেই ? আমি এদিকে চিন্তা করছি, বনি তোকে খুঁজতে বেড়িয়েছে। কোথায় ছিলি মা?” পূবালী নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দেয়, “ একজন হারিয়ে গিয়েছিল বাপি, তাকে খুঁজতেই সময় লেগে গেল। বনিকে ফোন করে বলে দাও আমি বাড়ি ফিরেছি। আমার শরীর ভালো লাগছে না। আমি ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে কোথা হবে।আর হ্যাঁ, চিন্তা কর না, যে হারিয়ে গিয়েছিল, তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।”
আজ সুশান্তের ফটোর উল্টো দিকে মুখ করে পূবালী শুয়েছে। খোলা জানলা দিয়ে চাঁদের আলো ওর বুকের ওপর এসে পড়

দুরের ওই চাঁদটার দিকে তাকিয়ে পূবালী ভাবছে, পৃথিবীর সবাই কেমন মুখোশ পরে বাঁচে। সুশান্তের আচরণে কখনও মনে হয় নি, পূবালির ভালবাসায় সে পরিপূর্ণ হতে পারে নি। কখনও মনে হয়নি আরও অনেক বেশি কিছুর প্রয়োজন ছিল সুশান্তের। মুখোশের এমনই গুন। বাপি ও বনিও তাকে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই দিতে নিজেদের কষ্ট চেপে রেখে মুখোশ পরে সব লুকিয়ে রেখেছে। আর আজ পূবালীও কিছু বলতে পারলনা কাউকে। এর পর কি সে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে? যখনই মন বিশ্বাস করতে চাইবে, তখনি অতীত তাকে খোঁচা দিয়ে যাবে। তবুও হাসি মুখে বাঁচতে হবে সবার সাথে। না, আর কিছু ভাবতে ভালো লাগছে না পূবালীর। কাল সকালে উঠে বাপি ও বনিকে জানিয়ে দেবে, সে বিয়ে করতে রাজি আছে। আপন মনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে সে নিজেকে বলল, “আজ নিজের মত করে ঘুমা পূবালী, কাল থেকে তোরও জীবনে শুরু হবে মুখোশ পরার খেলা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র