ঋষি সৌরক - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

ঋষি সৌরক



মুখোশ – রম্যরচনা







পরতে পরতে পোজ পাল্টাচ্ছে পাগলামো ...

এভাবেই যখন তখন রমন আছড়ে পড়ে তাহাদের প্রাগৈতিহাসিক বাগানের তলায়। একটা সময় ছিল প্রাথমিক জড়তা কাটাতে বেশ কিছুটা সময় লাগত। আদমের রাগরস তখন ছেনি কাটছে, কিন্তু ঈভের মধ্যে ততটা সাড়া নেই। কিছু বাধ্যতামূলক পূর্বরাগের পর ঈভ অনেকটা সহজ হত। ক্রমশ সময়ের দোলগতি এইসব পূর্ব-পশ্চিমের টুসকি কাটিয়ে অনেকখানি পরিণত হল। এখন ওরা দুজন দুজনকে বে এ এ এ শ ভালো চেনে – অতএব আজকাল পূর্বরাগ না, সরাসরি রাগে উপনীত হয় তাহাদের মধুভাণ্ড। পাগলামোর পাঁচকোটি পোজ পালটে এখন ওরা আর চোখ বাঁধে না পরস্পরের, হাতের মুষ্টিও বেঁধে দেয় না কষ দিয়ে ... দেদার খোলাপিঠে চাবুকের কামুদে ছোবল না, নিদেন উন্মুক্ত উত্তল বুকে গলন্ত বরফের রগড় ও না ... খেলনা বলতে নতুন দুটি মুখোশ ...

আদম কি অনায়াসে মেপে নেয় ঈভের অনন্ত শেকড়, এক-একটা কোপ মারতে থাকে যেন পুরো গাছটাকেই আজ উপড়ে ফেলবে! খেলাটা সেখানেই খেলা হয়ে ওঠে, যখন প্রাণবহুল গাছটি নীরবতা ভাঙ্গে শীৎকারে! তার বজ্রদৃঢ শেকড় কোন এক অজানা যাদুবলে পিচ্ছিল ভাসমান... রূপকথার হোলি রাজকুমার ও রাজকন্যের আবরণ ছিঁড়ে গাছ ও কাঠুরে উভয়েই মাংসাশী হয়ে ওঠে। ঠোঁট ছোঁয় না ঠোঁট , চোখের গভীরতায় লুকিয়ে থাকে না মৃত্যকূপ, নিশ্বাস ঢাকা পড়ে যায় মুখোশে, মুখোশের জিভ-আলজিভ থাকে না ... কর্ণকুহরে মৃত্যুকামী ফিসফাসতরঙ্গ উবু হয়ে বসে থাকে! শেকড় ছুঁয়ে জিরিয়ে নেয় বোহেমিয়া অসুখ ...শেকড়ের রোম রোম চুষে খায় ...আরো ফ্যাকাসে হতে থাকে প্রাচীনতম গাছের ছায়া

এভাবেই দুপুর গুলো ঝিমিয়ে পড়ে। দিনের আলো পাখিদের উড়ন্ত ঠোঁট থেকে যত্রতত্র খসে পড়লে আদম শিকারে যায়। কোন-কোনদিন ফেরে না ... গাছেদের ছাল-এ নাম লেখা থাকে! গাছ যেহেতু শিকারে যায় না, তাই তার ফেরা নিয়ে চিন্তিত নয় কেও। এই প্রবল নিশ্চিন্ত নিশুতি জীবনে আদমের ভূমিকাবিহীন প্রত্যাবর্তন সচরাচর দ্বন্দ্বমূলক হইয়া থাকে। পিঠে তাঁর ছলে-বলে-কৌশলে শেষ করা একটা আস্ত জীবন,যার চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে, শরীরে অজস্র ফাটল, ঝুলে পড়েছে চোয়াল ...রক্ত-ঘামে মাখামাখি এক প্রেমিক বুক ফুলিয়ে শিকার নামিয়ে রাখে প্রিয়তমার পায়ের পাতায়। এভাবেই চলতে চলতে একদিন আদম আবিষ্কার করে তাঁর গাছটি ক্রমশ মাংসাশী হয়ে উঠছে। শিকার আদমকে যতখানি ব্যাকুলভাবে ছোটায় রাত-দিন-পক্ষ-মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়! মাংসাশী গাছ কিন্তু ছুটতে পারে না, শিকারকে সে মোহগ্রস্ত করে – কাছে টেনে আনে! তারপর বিষকুম্ভে জারিত করে তোলে।

একদিন গভীর মধ্যাহ্নে আদমের ভয়ই সঠিক প্রমাণিত হইল। গুরুচণ্ডালীর ভজোকটো যাপন ভরে গিয়েছে নাম-না-জানা ছত্রাকে। একদিন যে গাছে জল দিয়ে সার দিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে বড়ো করে তুলেছিল আদম, তাকে দিয়েছিল বোঁটা থেকে খসে পড়ার অভিনীত সুখ ... তার তিলে তিলে জমিয়ে তুলেছিল বিষের জুস! এসবই আজ এই মধ্যাহ্নে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে আদমকে। অব্যক্ত নারকীয় উল্লাসে মেতে উঠেছে রঙ্গমঞ্চের প্রোটিনপিয়াস। এ কেমন ক্ষুধা – একটা সম্পূর্ণ মানুষের বোনলেস অস্তিত্ব গিলে নেয়! পাঁচবছরের বিবাহিত জীবনে বরাবরই প্রকট হয়ে উঠত চিকেন চাউমিন আর তেল-ঝোল-মশলা... মুখোশ খুলে শেষবারের মত একটা চুম্বন করতে চেয়েছিলো আদম... ঈভের মুখোশ খোলে নি

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র